ইতালির ভিসা কত প্রকার এবং কী কী?

1
10068
ইতালি ভিসা

আপনি যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন এবং ইতালিতে যেতে চান তাহলে একেবারে শুরুতে কী করতে হবে বলুন তো? এর উত্তর হলো: শুরুতেই আপনাকে ভিসা পেতে হবে। এখন নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন, আপনার জন্য কোন ভিসাটি জরুরি? আর কীভাবেই বা সেটি হাতে পাবেন? তবে চলুন দেখে নেয়া যাক-

ইতালিতে প্রবেশের জন্য আপনার যেসব ভিসার প্রয়োজন হতে পারে

তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইতালিতে থাকতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাইরের নাগরিকদের অবশ্যই ভিসার প্রয়োজন হবে। নির্দিষ্ট করে ঠিক কী কারণে আপনি ইতালি অবস্থান করতে চান, তার বিশদ তুলে ধরে আবেদন করতে হবে। সবার জন্য পরামর্শ হলো, আপনি যদি ইতালিতে বেশি সময় ধরে অর্থাৎ পড়াশুনা, কাজ, পারিবারিক ও অবসরজনিত কারণে অবস্থান করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে টাইপ ডি অথবা ডি-ভিসা নিতে হবে।
এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, বেশি সময়ের জন্য দেয়া ভিসা শুধুমাত্র আপনাকে ইতালিতে ঢোকার অনুমতি দিবে। কিন্তু আপনাকে সেখানে বসবাস করতে গেলে অবশ্যই রেসিডেন্সি পারমিট নিতে হবে।

দীর্ঘ সময় ধরে ইতালিতে অবস্থানের জন্য যে ভিসাগুলো সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়, তা হলো:

ওয়ার্ক ভিসা (কর্মজীবীদের জন্য)

ইউরোপের কয়েকটি দেশ যেমন নরওয়ে, আইসল্যান্ড, লিকতিনিস্তাইন ও সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা কোনো ধরনের ভিসা ছাড়াই ইতালিতে কাজ করার অনুমতি পান। অন্য দেশ থেকে আসলে অবশ্যই ওয়ার্ক ভিসা লাগবে। এক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের কাজ করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিতে হবে।

কারণ ভিসা আবেদনের আগে অবশ্যই আপনার চাকরি/কাজ পেতে হবে। ভালো খবর হলো চাকরি/কাজ পাওয়ার পর আপনার প্রতিষ্ঠানের মালিকই আপনার হয়ে ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার প্রদত্ত কাগজপত্র সঠিক হতে হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে আপনার স্থানীয় দুতাবাস আপনাকে একটি এন্ট্রি ভিসা দেবে। স্থানীয় দুতাবাসে পরিদর্শন এবং ভিসা সংগ্রহ করার জন্য অনুমোদনের তারিখ থেকে আপনার হাতে ছয় মাস থাকবে।

স্টুডেন্ট ভিসা (শিক্ষার্থীদের জন্য)

ইতালিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাইরের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে গেলে যা যা অনুসরণ করতে হবে:

ইতালিতে পড়াশোনার জন্য আবেদন করার সময় অবশ্যই ইতালিতে আপনার কোর্সের গ্রহণযোগ্যতার চিঠি প্রদান করতে হবে। একইসঙ্গে আবাসনের প্রমাণপত্র, পর্যাপ্ত আর্থিক স্বনির্ভরতার প্রমাণপত্র ও স্বাস্থ্যবীমা সম্পর্কিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে। পড়াশোনার সময়ের ওপর নির্ভর করে দুই ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া হয়।

টাইপ সি: সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবস্থানের ভিসা অথবা ট্রাভেল ভিসা (এই ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন)

টাইপ ডি: দীর্ঘসময়ের জন্য ভিসা (৯০ দিনের বেশি)

ফ্যামিলি ভিসা (যাদের আত্মীয়স্বজন ইতালিতে আছেন তাদের জন্য)

ইতালিয়ান নাগরিকদের এই ধরনের ভিসা সচারচার দেয়া হয়। অ-ইউরোপীয়ান হলে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন ইতালিয়ান নাগরিকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে অবস্থান করা যাবে দেশটিতে। এক্ষেত্রে আপনাকে ইতালিয়ান কোনো নাগরিকের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে হবে। এই ভিসা ইতালিতে সন্তান, স্ত্রী ও পিতামাতাকে অবস্থানের অনুমতি দেয়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সম্পর্ক প্রমাণের জন্য যথাযথ কাগজপত্র প্রদান করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কাবিননামা অথবা জন্মসনদও হতে পারে।

বিনিয়োগকারী ভিসা (যাদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে)

‘গোল্ডেন ভিসা’ নামে একটি আকর্ষণীয় ভিসা প্রোগ্রাম রয়েছে ইতালির। যারা দেশটিতে বিনিয়োগ করতে চায়, তাদের জন্য মূলত এই ভিসা। অ-ইউরোপীয় ও শেনজেনভুক্ত দেশের নাগরিকরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ লাখ থেকে ২ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত বিনিয়োগের শর্ত রয়েছে। এই ভিসার আওতায় দুই বছর ও পরবর্তীতে আরো তিন বছরের জন্য থাকার অনুমতি, বিশেষ কর রেয়াদ সুবিধা এবং বিনিয়োগকারীদের পরিবারের জন্য দেশটিতে প্রবেশের অনুমতিও রয়েছে।

নির্বাচনী আবাসিক ভিসা (অবসরপ্রাপ্তদের জন্য)

যারা স্বচ্ছল এবং যাদের মোটা অংকের পেনশন সুবিধা রয়েছে, তারা যদি ইতালিতে গিয়ে কোনো কাজকর্ম ছাড়াই বসবাস করতে চান, তাহলে তাদের জন্য এই ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ভিসাকে কখনো কখনো রেমিটেন্স ভিসাও বলা হয়।

ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা (তরুণদের জন্য)

কিছু নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক-যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, তাদের জন্য ইতালি ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা প্রোগ্রাম চালু করেছে। দেশটিতে বছরজুড়ে কাজ করা ও থাকার অনুমতি দেয় এই ভিসা।

সহজে ভিসা পেতে আপনার যা করণীয়..

আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোনো ভিসার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ইতালিয়ান অ্যাম্বাসি অথবা স্ব স্ব দেশের কনস্যুলেটে গিয়ে আগে থেকে ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু করুন। অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে এই জায়গাগুলোতে গেলে কোনো ঝামেলা ছাড়া আপনি কাঙ্খিত ভিসা পেতে পারেন।
মনে রাখবেন, ভিসা হাতে পেলেই কেবল নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ নেই যে, আপনি ইতালিতে থাকার অনুমতি পাচ্ছেন। ইতালিতে প্রবেশের পর আপনাকে অবশ্যই আটদিনের মধ্যে রেসিডেন্সি পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে রেসিডেন্সি পারমিটের সময়সীমা নির্ধারিত হবে আপনার হাতে থাকা ভিসার ধরনের ওপর।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here