কাঠের ডিঙ্গি নৌকা কিংবা রাবারের ছোট নৌকা নয়, অভিবাসন প্রত্যাশীদের পাচার করতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিলাসবহুল প্রমোদতরী। উত্তর আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের প্রচলিত রুটের বদলে পাচারকারীরা এখন স্বল্পপরিচিত ইতালির দক্ষিণ উপকূলীয় ক্যালাব্রিয়ান রুট ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে ইরান ও তুরস্ক পাড়ি দিয়ে এই পথেই ক্যালাব্রিয়া উপকূলে পৌঁছেছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশ কয়েকটি দল। মূলত চোরাকারবারীদের রুট হলেও এখন মানবপাচারেও ব্যবহার হচ্ছে এই পথ। মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপে পৌঁছানোর অন্যতম রুট হয়ে উঠছে ক্যালাব্রিয়ান।
লিবিয়া এবং তিউনিসিয়া থেকে আসা ইউরোপগামী প্রচলিত নৌকাগুলির তুলনায়, এই ধরনের একটি নৌকায় চড়ে আসার ধারণাটি বিলাসবহুল শোনাতে পারে, তবে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং কর্তৃপক্ষ উভয়ই দাবি করেন যে, স্বল্প পরিমানে খাবার এবং পানি মজুদ থাকে এই নৌকাগুলোতে। পালতোলা এই বিলাসবহুল নৌকার ভাড়া হিসেবে খরচ করতে হয় জনপ্রতি ১০ হাজার ডলার। নিরাপত্তা বাহিনীর নজর এড়াতে নৌকার ডেকের নিচে গাদাগাদি করে রাখা হয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের। তাই উপর থেকে শুধু নাবিকদের দেখা যায়।
নৌকার এক আফগান যাত্রী হামিদ বলেন, ‘পাচারকারীরা প্রথম চার-পাঁচ দিন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করলেও তা ফুরিয়ে যাওয়ার পর যাত্রীরা শেষ দুই দিন চিনি দিয়ে সমুদ্রের পানি পান করেন।’
হামিদের বোন তুবা বলেন, ‘তাদের পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেছে। আইনজীবী হিসাবে কাজ করার কারণে তিনি আফগানিস্তানে নিরাপদ বোধ করছিলেন না’।
এই রুটে মানবপাচারে জড়িত চক্রটি মূলত ইউক্রেনভিত্তিক। তবে তুরস্ক আর ইতালির মাফিয়াদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ রয়েছে বলে ধারণা ক্যালাব্রিয়া কর্তৃপক্ষের। এই নৌকাগুলো আটকানো কঠিন। বিলাসবহুল বলে দূর থেকে সন্দেহের তেমন সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবৈধ পথে ক্যালাব্রিয়ায় পৌঁছেছে প্রায় ৯ হাজার ৬৮৭ জন। যা গত বছরের তুলনায় ৪ গুণ বেশি। ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিরা বলছেন, জাহাজে করে আসা এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে অনেক শিশুও রয়েছে।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় নিত্য নতুন কৌশল যুক্ত হচ্ছে। ইউরোপমুখী অভিবাসনের এ স্রোত মহাদেশটিতে অভিবাসী বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলছে। এই স্থির সংকট নিরসনে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নতুন কোনো উপায় খুঁজতে হবে শীঘ্রই।