শনিবার, 27 জুলাই, 2024

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও দক্ষ শ্রম অভিবাসনে চ্যালেঞ্জসমূহ (দ্বিতীয় পর্ব)

আমিনুল হক তুষার ও রওনক আরা পারভীন

মানব পাচার প্রতিরোধ

জাতিসংঘের (ইউএন) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের, বিশেষ করে উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী মানব পাচারের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

কক্সবাজার (মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া), পটুয়াখালী, ভোলা, খুলনা (কয়রা) এবং বাগেরহাট (শ্যামনগর)-এর মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। যার ফলে অনেকে পাচারকারীদের খপ্পরে পরে, যারা তাদের উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়।

ভুক্তভোগীরা প্রধানত নারী ও শিশু। তাদেরকে কেবল দাসত্ব বা জোরপূর্বক শ্রমের জন্যই পাচার করা হয় না বরং অঙ্গের অবৈধ ব্যবসা বা যৌনদাস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে খুলনা ছাড়াও সম্প্রতি সিলেট (মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ) অঞ্চলেও অনিয়মিত অভিবাসন ও মানব পাচারের ঘটনা বেড়েছে।

উইনরক ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ কাউন্টার ট্র্যাফিকিং-ইন-পার্সনস (বিসি/টিআইপি) প্রোগ্রামের তথ্য অনুসারে, খুলনা (১৫%) এবং সাতক্ষীরা (১৭%) জেলার পর কক্সবাজার মানব পাচারের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। বিশেষত টেকনাফ শহর হতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলিতে (যেমন: মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড) সমুদ্রপথে মানব পাচার এখনো অব্যাহত রয়েছে।

দক্ষতা উন্নয়ন

বাংলাদেশে ৩২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ৪৭৮টি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান, ১৬৬টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১৮৩টি কৃষি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং ১২০টি চিকিৎসা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ দুই হাজার ৫৪০টিরও বেশি কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভেট) প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে দক্ষতা উন্নয়ন একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

আরো পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও দক্ষ শ্রম অভিবাসনে চ্যালেঞ্জসমূহ

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কক্সবাজার এবং বাগেরহাট ব্যতিত সমস্ত দুর্যোগ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অধীনে কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন ট্রেডভিত্তিক স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী কোর্স পরিচালনা করে।

তবে ভোলা, গাইবান্ধা, কক্সবাজার এবং পটুয়াখালী জেলার নারীরা কারিগরী প্রশিক্ষণের সুযোগ থেকে কিঞ্চিৎ বঞ্চিত, যা তাদের নিজস্ব এলাকায় এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করছে।

আয়-বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজিত আধুনিক শস্য উৎপাদন এবং জীবিকা নির্বাহের কৌশল সম্পর্কে মানুষকে দক্ষ ও সচেতন করার জন্য যেসব সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এমনকি কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য বিষয়ক বিভাগ, বিটাক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন বিভাগও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সমস্যাগুলি পর্যাপ্তভাবে মোকাবিলা করা ও অভিযোজনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কাঁকড়া এবং কুচিয়া চাষ বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল ও কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয়, মৎস্য বিভাগ আধুনিক হ্যাচারি কৌশল সম্পর্কে মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে বা রপ্তানিমুখী কাঁকড়া ও কুচিয়া উৎপাদনের জন্য এখনও কোনও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

অন্যদিকে, উপকূলীয় এবং চর অঞ্চলের জন্য ভেড়া ও ছাগল পালন অত্যন্ত উপযুক্ত বিকল্প। সাধারণ গবাদি পশুর তুলনায় কম খাদ্য সরবরাহ, নোনা জল এবং তুলনামূলক স্বল্প শ্রমে ভেড়া ও ছাগল চরম জলবায়ুতে পালনযোগ্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এই অনুশীলনগুলি প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়ে দরিদ্র ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজিত হওয়ার জন্য খুবই কম কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

নারীর ক্ষমতায়ন

বিভিন্ন সমীক্ষায় ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন হতে জানা যায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নিজেদের ক্ষমতায়নে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন।

এর মধ্যে রয়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমিত সুযোগ, যা তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন তথা ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্থ করে।

 এছাড়া স্থানীয় ও ধর্মীয় রীতি-নীতি ও অনুশাসনও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল অনুশীলন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতে নারীদের অংশগ্রহণকে সীমিত করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিশেষ করে কৃষিচাষ, সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা বঞ্চিত থেকে যান। এছাড়া, শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব নারীদের দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্থ করে।

আরো পড়ুন: ‘একজন অভিবাসী নারীও নিপীড়িত হবে না, এটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে’

খুলনা, বাগেরহাট, কক্সবাজার ও বরিশাল এলাকায় ধমীয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নেতিবাচক অনুশীলনও নারীর ক্ষমতায়নে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্যের সীমিত প্রবেশাধিকার থাকাতে অনেক সময় এই অঞ্চলসমূহের নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা ও অধিকারও থাকে না।

আবার, অথনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের সীমাবদ্ধতা যেমন: জলবায়ু-স্মার্ট বিনিয়োগ অনুশীলনে কিংবা দুর্যোগ সহনশীল টেকসই বসত-ভিটা নির্মাণে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্থ করে। এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমন প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণরূপে তাদের অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ, শিক্ষা এবং সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

‘জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্যের সীমিত প্রবেশাধিকার থাকাতে অনেক সময় এই অঞ্চলসমূহের নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা ও অধিকারও থাকে না’

সংকট উত্তরণে সুপারিশসমূহ

চরম জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল এবং অভিযোজিত জীবিকা পদ্ধতির অনুশীলন সম্প্রসারণ করা এবং টেকসই জীবিকা সম্পর্কে নারী-পুরুষকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি, আমাদের নিরাপদ ও দক্ষ শ্রম অভিবাসনের বিষয়ে ঝুঁকিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।

এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের নারী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বৃত্তিমূলক ও ট্রেড ভিত্তিক কারিগরী ও আইজিএ প্রশিক্ষণ প্রদান করা জরুরি। পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ ও উদ্যোগ গ্রহণের উপর জোর দিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, কক্সবাজার এবং গাইবান্ধায় বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর এর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করার জন্য নিরাপদ ও দক্ষ শ্রম অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সরকারকে অবশ্যই নিরাপদ ও দক্ষ অভিবাসন নিশ্চিতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, সরকারের উচিত বৃত্তিমূলক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মানোন্নয়নে বিনিয়োগ করা, যেন স্থানীয় বেকার ও দরিদ্র যুবক-যুবতী গন্তব্য দেশে ও নিজ দেশে কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

এই কর্মসূচিগুলি বিদেশের পাশাপাশি দেশে শ্রম বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাস্তবায়ন করা উচিত। একইসঙ্গে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং ভাষা শিক্ষার উপরে প্রশিক্ষণ প্রদানের দিকেও মনোনিবেশ করা উচিত।

এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে জলবায়ু অভিযোজিত আয়-বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ (যেমন: জলবায়ু সহনশীল এবং লবণ সহনশীল ফসল/শস্য চাষ, শাকসবজি চাষ, মৎস্যচাষ, নার্সারি, হ্যাচারি, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুপালন ইত্যাদি) প্রদান করতে হবে ও আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে।

আরো পড়ুন: উপকূলীয় এলাকার ‘জলবায়ু অভিবাসী’রা ত্রাণ নয়, স্থায়ী সমাধান চান

বলা হয়ে থাকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য এটি সর্বোত্তম কৌশল। এছাড়া জলবায়ু অভিযোজিত কৃষি পদ্ধতি, গবাদি পশু ও মৎস্যচাষে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন। সরকারকে এই ধরনের কার্যক্রমের জন্য আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ করতে হবে ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

সরকারের উচিত একটি সমন্বিত অভিবাসন নীতি প্রণয়ন করা যা উপকূলীয় ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিগ্রস্থ জেলা থেকে শ্রম অভিবাসনকে বিশেষ গুরুত্ব দিবে। এই নীতিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলগুলি থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাগুলিকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করবে এবং অঞ্চলগুলোতে পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারী খাতকে উদ্বুদ্ধ করবে। এছাড়া, উক্ত নীতি পরিবর্তিত জলবায়ু অভিযোজিত ব্যবসা-উদ্যোগের উন্নয়নে প্রবাসী বিনিয়োগের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিবে।

অভ্যন্তরীণ এবং অনিয়মিত শ্রম অভিবাসনের প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য সরকারকে স্থানীয় এনজিও, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করতে হবে। যাতে আরও ব্যাপক পর্যায়ে জলবায়ু অভিযোজিত ব্যবসা কার্যক্রম, কৃষিকাজ এবং বাণিজ্যের সম্প্রসারণ করা যায়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে কার্যকর নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলি হতে দক্ষ শ্রম অভিবাসন নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট  সকল মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে একযোগে কাজ করতে হবে।

মানব পাচার প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ভিজিলেন্স টাস্ক ফোর্স (ভিটিএফ) এবং মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির (জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্র্যাফিকিং কমিটি) ভিতর সমন্বয় করে শ্রম অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রম তদারকি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।  

শ্রম অভিবাসীর পরিবার ও বিদেশ ফেরত কর্মীদের বিকল্প জীবিকার জন্য সরকারের উচিত জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিগ্রস্থ এলাকায় কৃষি, সেচ ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার/ প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য মৌলিক পরিষেবাগুলিতে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি টেকসই কৃষি, গবাদিপশু ও মৎস্য চাষের উপরে জোর দেয়া।

উপসংহার

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি প্রকট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসনের বিষয়টি আজ বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী দশকগুলিতে পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যূতি ও নরগরকেন্দ্রিক অভিবাসন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন: শ্রম অভিবাসনের বিভিন্ন ধাপে কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলো ইতিমধ্যে জলবায়ু শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এই অভিবাসন কেবল উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই নয়, বরং তারা যে দেশ ও নগরে অভিবাসন করে তাদের জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বেশ জটিল এবং বহুমুখী। যার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলোর সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

সুতরাং, অভিযোজিত হওয়ার চাহিদা মেটাতে, চরম জলবায়ুর প্রভাব ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করতে কিছু নীতি, কৌশল ও অ্যাকশনপ্ল্যান নির্ধারণ করা আবশ্যক। সঠিক সময়ে কার্যকর নীতি ও কৌশল নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হলে বিদ্যমান সংকট চরম মাত্রা ধারণ করবে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চরম ভোগান্তি ডেকে আনবে।

লেখক: আমিনুল হক তুষার, শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক ও উন্নয়ন কর্মী এবং রওনক আরা পারভীন,  সহকারী অধ্যাপক, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা