ভূমধ্যসাগরের অভিবাসীদের জন্য ইউরোপ দায়বদ্ধ

0
1032
এমইপি-র বায়োপিক এবং ল্যাম্পেডুসার ডাক্তার মৌরিজিও জ্যাকাকারোর 'নূর' চলচ্চিত্র থেকে নেওয়া। পিয়েট্রো বার্তোলো | ছবি: আনসা / প্রেস অফিস

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (এমইপি) এর সদস্য এবং অভিবাসী চিকিৎসক পিট্রো বার্তোলো বলেছেন, ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের জন্য ইউরোপ দায়বদ্ধ।

ইতালীয় দ্বীপ ল্যাম্পেপুসাতে বছরের পর বছর ধরে অভিবাসীদের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন বার্তোলো। তিনি বলেছেন যে, ভূমধ্যসাগর এবং লিবিয়ায় এখন যা ঘটছে তার জন্য ইউরোপের সর্বাধিক দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং ইউরোপের যেটি করা উচিত, তা সে করছে না।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সদস্য বিশ্বাস করেন যে, ভূমধ্যসাগর এবং লিবিয়ায় যা ঘটছে তার জন্য ইউরোপের দায় সবচেয়ে বেশি।

পিট্রো বার্তোলো গত বুধবার ফ্লোরেন্স সিটি কাউন্সিলে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তাকে ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়ার সীমান্তে এমইপি দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক পরিদর্শন সম্পর্কে কথা বলতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

‘আমি যখন ইউরোপের কথা বলি, তখন আমি সদস্য দেশগুলির বিষয়ে কথা বলি এবং আমি ইউরোপীয় কমিশনের বিষয়েও কথা বলি। যা তাদের করা উচিত নয় তা হলো, চুক্তিগুলির প্রতি, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে বলা। কারণ ইউরোপ জুড়ে নিয়মিতভাবে এগুলো লঙ্ঘিত হয়েছে।’ বার্তোলো বলেছিলেন, ‘আমিসহ আমাদের সকলের ভূমিকা নিয়ে নিজেদেরই কথা বলতে হবে’।

অভিবাসীদের বিষয়ে নীতিমালা এখনওব্যর্থতায়আবদ্ধ

বার্তোলো বলেছিলেন, ‘এই অভিবাসন বিষয়টিকে আমরা এখনও পর্যন্ত মোকাবিলা করতে পারিনি, যা একটি পরিপূর্ণ ব্যর্থতা । আমরা প্রমাণিত হয়েছি এবং নিশ্চিত করেছি যে বর্তমানের ‘ডাবলিন ৩ চুক্তি’ একটি ব্যর্থতা ছিল। ডাবলিন ৩ চুক্তি বাস্তবায়নের তথ্য-উপাত্তের জন্য আমিও একজন প্রত্যক্ষ কর্মী ছিলাম।

এবং আমরা তথ্য-উপাত্তগুলো এই বলে সংযুক্ত করেছিলাম যে এটি ইউরোপীয় সংসদে গৃহীত একটি ব্যর্থতা। এটি একটি চুক্তি যা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে কথা বলে, সীমান্তকে শক্তিশালী করার বিষয়ে, একটি ইউরোপীয় দুর্গ তৈরি করার বিষয়ে কথা বলে এবং এটি আসলেই কল্যাণকর নয়।

‘এটি গ্রিস, ইতালি, মাল্টা, সাইপ্রাস, স্পেন ও ক্রোয়েশিয়াসহ অভিবাসীদের প্রথম প্রবেশদ্বার দেশগুলির কাঁধে আরও বেশি বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছে।’ সুতরাং আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যকরী চুক্তির ৮০ অনুচ্ছেদে প্রকাশিত এই সংহতি নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ঘৃণা প্ররোচিত করার  বিরুদ্ধে  বিচার হওয়া উচিত

বার্তোলো বলেছেন, যেসব ধারণা ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয় তা রাজনৈতিক নয় বরং অহংকারের বহিঃপ্রকাশ।‘আমি মনে করি ঘৃণা একটি ভুল পথ, আসলে এটি একটি অপরাধ, কারণ ঘৃণা প্ররোচিত করার বিরুদ্ধে অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’

‘আমি মনে করি বরং রাজনীতির এর উত্তর দেওয়া উচিত’  কারণ ‘এই রাজনীতিকেই  সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এইসব মানুষের জন্য  দরজা বন্ধ থাকবে না খুলে দিতে হবে, এইসব মানুষদের ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে বা গভীর জঙ্গল লিপাতে মারা যেতে হবে, নাকি  তাদের বাঁচাতে হবে । লিবিয়া বা তুরস্কের কাছে তাদের নিয়োগ দিতে হবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটাই রাজনীতি যাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, সে  ভালোর পক্ষে  থাকবে নাকি খারাপের পক্ষে-বার্তোলোর বক্তব্যে উঠে এসেছিল এমনি কিছু প্রশ্ন।

বার্তোলো আরো বলেন, ‘সমস্ত ইউরোপীয় রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে তাকে এই উত্তরগুলি দিতে হবে।কারণ অভিবাসন প্রত্যয়টি নিয়ে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারি, কিন্তু মানুষের জন্মের সঙ্গে মিশে থাকা এই অভিবাসন প্রক্রিয়াকে থামাতে পারিনা, এটি বিদ্যমান থাকবেই’।

সুতরাং, ‘এটিকে অবশ্যই আলাদাভাবে মোকাবেলা করতে হবে। লড়াইয়ের মাধ্যমে, প্রত্যাবাসন করে, কাঁটাতার বসিয়ে, দেয়াল তুলে বা আরো দুর্ভেদ্য উপায়ে মানসিক দেয়াল তৈরি করে অভিবাসনকে থামানো সম্ভব নয়।’

কারণ,‘আমরা মানুষকে এইভাবে থামাতে পারি না, গত ত্রিশ বছর ধরে একইভাবে আমরা অভিবাসন নিয়ে, অভিবাসনের সমস্যা নিয়ে কথাই বলে যাচ্ছি।’

সুতরাং, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, উত্তরগুলি আমাদের ভেতরকার মূল্যবোধের ভিত্তিতে অবশ্যই সঠিক হওয়া উচিত এবং সেগুলো যেন সংহতি প্রকাশ করে, সেগুলো যেন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও জীবনের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে-পিট্রো বার্তোলো

ইনফো মাইগ্রেন্টস অবলম্বনে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here