আপনজন আর প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে ইতালিতে গিয়ে যে কেউ একটি নিরাপদ জায়গায় থিঁতু হতে চাইবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদেরও এমন প্রত্যাশা থাকে। তো জানেন কি, ইতালির যে অঞ্চলটিতে বসবাস ও চাকরি-বাকরি করবেন, সেই জায়গাগুলো কতোটা নিরাপদ? কিংবা আপনি ইতালির যে শহরে বসবাস করছেন, তা আপনার জন্য কতোটা নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত? ইতালির সংবাদমাধ্যম সোলে ২৪ ওরে দেশটির বিভিন্ন এলাকার তথ্য বিশ্লেষণ করে নিরাপদ অঞ্চল চিহ্নিত করেছে, বিপরীতে শীর্ষ অপরাধের হটস্পট হিসেবে দেশটির মিলান ও লম্বার্দির নাম সংবাদমাধ্যমটির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত নতুন এই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, লকডাউন শিথিল করার পর ইতালিতে অপরাধ প্রবণতা আবার বেড়ে গেছে। সাধারণত কোনো অঞ্চলে সংঘটিত অপরাধের মাত্রা, সংখ্যা ও ধরণ বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে নিরাপদ ও বিপজ্জনক স্থান নির্ধারণ করা হয়।
সংবাদমাধ্যম সোলে ২৪ ওরে এর তথ্য বিশ্লেষণ করে মিলান ও লম্বার্দিকে ইতালির ‘অপরাধের রাজধানী’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মাথাপিছু এক লাখ বাসিন্দার উপর সংগঠিত অপরাধের সংখ্যা অনুযায়ী, এই শহর এবং প্রদেশটি প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
২০২১ সালে এই এলাকায় মোট এক লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩টি অপরাধ নথিভূক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি এক লাখ মানুষের বিপরীতে অপরাধের সংখ্যা গড়ে ৪ হাজার ৮৬৬টি।
প্রতি লাখ জনসংখ্যায় গড়ে চার হাজার ৬৩৬টি সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বোলোগনা এবং ৪ হাজার ৬০৩টি সংখ্যা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রিমিনি।
সামগ্রিক অপরাধ সংঘটনের তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে প্রাতো, ফ্লোরেন্স ও তুরিন। মাথাপিছু এক লাখ বাসিন্দার উপর সংঘটিত ৪ হাজার ১৫০টি অপরাধের সংখ্যা নিয়ে রোমের অবস্থান সপ্তম।
অপরাধের ধরন অনুযায়ী এর মানচিত্র পরিবর্তন হয়
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ত্রিয়াস্তে প্রদেশে যৌন নিপীড়নের হার সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে ২০ ভাগই যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই প্রদেশটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো যৌন সহিংসতার শীর্ষে অবস্থান করছে।
পাদুয়া মাদক বিষয়ক অপরাধের জন্য প্রথম স্থানে রয়েছে। নেপলস ডাকাতি ও চুরির রেকর্ডে শীর্ষে। পার্মায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দোকান ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যা মহামারি চলাকালীনও অব্যাহত ছিল।
নিরাপদ শহরের তালিকা
পরিসংখ্যানে ইতালিতে সবচেযে কম অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। সার্ডিনিয়ার ওরিস্তানো বর্তমানে মাথাপিছু দায়ের করা অভিযোগের সংখ্যার দিক থেকে ইতালির সবচেয়ে নিরাপদ প্রদেশ হিসাবে স্থান পেয়েছে।
নিচে ইতালির শীর্ষ দশটি নিরাপদ প্রদেশের তালিকা প্রকাশ করা হলো। মূলত বাসিন্দার সংখ্যা, সংঘটিত অপরাধের প্রকারভেদ ও পরিমাণের তথ্যের উপর ভিত্তি করে উক্ত তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।
১. ওরিস্তানো, সার্ডিনিয়া
২. পোর্দেনোনে, ফ্রিউলি-ভেনেজিয়া গিউলিয়া
৩.বেনেভেন্তো, ক্যাম্পানিয়া
৪. ত্রেভিজো, ভ্যানেতো
৫.কুনিও, পিওমন্তে
৬. লদি, লম্বার্দি
৭.লাকুইলা আব্রুজ্জো
৮. পোতেনজা, ব্যাসিলিকাতা
৯.ছোন্দ্রিও, লম্বার্দি
১০. ত্রেন্তো, ত্রেন্তিনো-আলতো অ্যাদিজে
এদিকে চুরির ঘটনা সব থেকে কম দেখা গিয়েছে ওরিস্তানোতে। পোর্ডেনোন শহরে অগ্নিসংযোগজনিত অপরাধের সংখ্যা সব থেকে কম। সুখবর হলো, যৌন সহিংসতার হার সবচেয়ে কম দেখা গেছে বেনেভেন্তোতে । চলতি বছর এখানে যৌন সহিংসতার কোনো ঘটনা রেকর্ড করা হয়নি।
আরো পড়ুন
▪ ইতালিতে তরুণ অভিবাসীদের জীবনে রং ছড়াচ্ছে স্ট্রীট আর্ট
▪ ইতালির ভিসা কত প্রকার এবং কী কী?
▪ গত সাত মাসে কোন দেশের কতজন সাগরপথে ইতালি গেছেন?
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইতালিতে গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ২১৫টি অপরাধ রিপোর্ট করা হয়েছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ ভাগ বেশি।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লকডাউন শিথিল করার পর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কেবল বাড়ছেই না, অপরাধের ধরণেও পরিবর্তন এসেছে।
গত কয়েক বছরে ইতালিতে কম্পিউটারাইজড পরিষেবা এবং অনলাইন কর্মকাণ্ডে সাইবার অপরাধ বেড়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখন চুরির ঘটনার প্রায় অর্ধেক এবং মোট অপরাধের ১৫ শতাংশ সাইবার আপরাধের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে। এটি মহামারির আগে সংঘঠিত অপরাধের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ফিশিং, জালিয়াতি, পরিচয়পত্র চুরি এবং ডিজিটাল অপরাধের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের প্রথম মাসে, ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায়, জালিয়াতি ২০ শতাংশ বেড়েছে যেখানে আইটি-সম্পর্কিত অপরাধ ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
উল্লেখ্য যে, লকডাউনের সময়গুলোতে ইতালিতে চুরি, ডাকাতি এবং যৌন নিপীড়ন হ্রাস পেলেও তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে, মোটরবাইক চুরি ১৭ শতাংশ এবং গাড়ি চুরির ঘটনা ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র: ইউরো নিউজ