শেরপুরের শ্রীবরদীতে বনবিভাগ কর্তৃক গারো আদিবাসীদের ফসল কেটে ফেলার প্রতিবাদে এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাজং আদিবাসী নারীর উপর যৌন নিপীড়নকারীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১৭ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এর উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে’র সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরি রুপম বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও আদিবাসীদের মৌলিক আধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ভূমি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের উচিত সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারনে দেশে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি আজকের এই সমাবেশ থেকে আদিবাসী নারীর উপর ধর্ষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান। তিনি আরো বলেন, ‘শুধু যে সুনামগঞ্জ কিংবা শ্রীমঙ্গলে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতা ঘটছে তা নয়, দেশের পাহাড় এবং সমতলে সকল নারীরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।’ রাষ্ট্রের কাছে তিনি সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের নামে শেরপুরের শ্রীবরদীতে বনবিভাগ কর্তৃকগারো আদিবাসীদের জুমের ফসল কেটে ফেলায় প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার সমপরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাঁচটি আদিবাসী পরিবার। এছাড়াও উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে অর্ধশতাধিক আদিবাসী পরিবার।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু শেরপুরের ঘটনায় নয়, দেশের সিলেট, টাঙ্গাইল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামেও আদিবাসীদের উচ্ছেদের যড়যন্ত্র করছে বন বিভাগ।’ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া গারো কিশোরীকে ধর্ষণকারীদেরও দ্রুত গ্রেফতার এবং শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান এই আদিবাসী ছাত্রনেতা।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, ‘বন যেখানে আদিবাসী সেখানেআদিবাসী যেখানে বনও সেখানেযখন বনবিভাগ ছিলনা তখন বন ভালো ছিল।কিন্ত যখন থেকে বন বিভাগ বন রক্ষার দায়িত্ব নিলো তখন থেকে বন উজাড় হওয়া শুরু হলো।’
এছাড়াও উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ।
সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়:
১. শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ পাঁচটি গারো আদিবাসী পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ এই কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তি প্রদান ।
২. আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা ।
৩. হাজং আদিবাসী নারীর উপর যৌন নিপীড়নকারীর দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা।
৪. মৌলভীবাজারের ডলুছড়া এবং সাহেব টিলার গারো ও খাসিয়া আদিবাসীদের উচ্ছেদ বন্ধ করা।
৫. সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।