বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি নারী বিদেশে অবস্থান করছেন। গত ছয় বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি নারী দেশে ফিরেছেন। যাদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
গত ছয় বছরে নানা সংকটে পড়ে দেশে ফিরেছেন অন্তত ৬৭ হাজার নারী অভিবাসী। দেশে ও বিদেশে এই নারীদের সুরক্ষা, মর্যাদা এবং পুনর্বাসনে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি—এমনটাই মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা।
আজ ঢাকার একটি হোটেলে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘নারী অভিবাসীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নে আমরা সবাই এক’ শীর্ষক কর্মশালায় এই আহ্বান জানানো হয়। কর্মশালাটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ প্রকল্প ‘প্রত্যাশা-২’ এর আওতায় অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, নারী অভিবাসনের হার বাড়ছে এবং বিদেশে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশে ফেরার পর যেন তারা সম্মানজনকভাবে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জানান, এসএমই ফাউন্ডেশন বিদেশ-ফেরত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা প্রদান করবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী মনে করেন, নারীরা পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের নানা স্তরে সহিংসতার শিকার হন, এবং বিদেশে যেন তারা বিপদের সম্মুখীন না হন, সে জন্য অভিবাসন ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশ-ফেরত নারীদের সেবা প্রদানেও সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর রেইজ প্রকল্পের পরিচালক ড. এটিএম মাহবুব-উল-করিম জানান, ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ৩১ হাজার বিদেশফেরত নারীকে চিহ্নিত করে সেবা দিয়েছে, এবং এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, যথাযথ দক্ষতা ছাড়াই নারীদের বিদেশে পাঠানো হয়, যার ফলে তারা নানা নির্যাতনের শিকার হন। দেশে ফিরে তারা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নও হন। তিনি মনে করেন, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় নারীদের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি নারী বিদেশে কর্মরত। গত ছয় বছরে ৬৭ হাজারের বেশি নারী নানা সংকটে পড়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন, যাদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার। তিনি জানান, এই নারীদের সহায়তায় কাজ করতে ব্র্যাক গঠন করেছে ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্রেন্টস’, যার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি সব সংস্থা একত্রে কাজ করতে পারবে।
বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী মন্তব্য করেন, ফিলিপাইনের মতো বাংলাদেশেও নারী অভিবাসীরা সমস্যায় পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, নিপীড়নকারী নিয়োগকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্রেন্টস’-এর চেয়ারপারসন শীপা হাফিজা। তিনি বলেন, সবাই মিলে কাজ করলে নারী অভিবাসীদের পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন: অধ্যাপক ইশরাত শামীম, সভাপতি, সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজ, ড. রুবিনা হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্টারপ্রেনার্স, রাহনুমা সালাম খান, ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার, আইএলও, আমরিন জামান আনিশা, প্রোগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট, আইওএম, মোঃ রেজওয়ানুল হক চৌধুরী, উপপরিচালক, বিএমইটি, শরিফুল ইসলাম, উপপরিচালক (কল্যাণ), ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড, নাজনীন আখতারী, প্রোগ্রাম অফিসার, নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ফেরদৌস নিগার, প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, শেখ রুমানা, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন, মোস্তফা জামিল, প্রতিনিধি, ব্লাস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ অংশগ্রহণে আয়োজিত এই কর্মশালায় নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা, সেবা ও পুনর্বাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি