ইউরোপে অভিবাসীদের ঠেকাতে শব্দের বিস্ফোরণ!

0
6359

মহামারির তাণ্ডব কিছুটা স্তিমিত হয়েছে, বিশ্বজুড়ে আবার উন্মুক্ত হচ্ছে ভ্রমণের দুয়ার। একই সঙ্গে ইউরোপ তাদের অভিবাসীদের জন্য প্রেরণ করছে একটি কঠোর বার্তা: দূরে থাকুন!

গ্রিক সীমান্ত পুলিশ একটি সাঁজোয়া ট্রাক থেকে তুরস্কের সীমান্ত তীরে অতি উচ্চ মাত্রার ‘শব্দ বিস্ফোরণ’ চালাচ্ছে। যানবাহনে লাগানো দূরপাল্লার অ্যাকোস্টিক ডিভাইস বা ‘শব্দ কামান’ নামে পরিচিত এই যন্ত্রটির আকার একটি ছোট টিভি সেট এর মতো হলেও এর শব্দের তীব্রতা একটি জেট ইঞ্জিনের সমান ।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চলাকালীন ‘অবৈধভাবে’ ইউরোপীয় ইউনিয়নে মানুষের প্রবেশ বন্ধের এই অত্যাধুনিক পদ্বতিটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ।মূলত তুরস্কের সঙ্গে ২০০ কিলোমিটারের গ্রিক সীমান্তজুড়ে এটি স্থাপন করা হয়েছে। 

মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত প্রাচীরের অনুরূপ একটি নতুন স্টীলের প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। প্রাচীরটি গ্রিস ও তুরস্ককে পৃথককারী এভ্রোস নদীর তীরে সচারচার ব্যবহৃত প্রবেশ পথগুলোকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে।

প্রাচীরের পর্যবেক্ষণ টাওয়ারগুলিতে দীর্ঘ পরিসরের ক্যামেরা, নাইট ভিশন এবং একাধিক সেন্সর লাগানো হচ্ছে। এমনকি সন্দেহজনক অনুপ্রবেশ শনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেটাগেুলোকে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলোতে প্রেরণ করা হবে।

২০১৫-১৬ সালে সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গ্রিসে এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই সময়ে তৈরি হওয়া শরণার্থী সঙ্কটের পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুরক্ষা প্রযুক্তি গবেষণায় প্রায় তিন বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করেছে।

গ্রিক-তুর্কি সীমান্তে নির্মিত এই স্বয়ংক্রিয় নজরদারি নেটওয়ার্কটি শীঘ্রই অভিবাসীদের শনাক্ত করা, তাদের নদী পারাপার করা থেকে বিরত রাখতে স্থলসীমান্তে সার্চলাইট টহলসহ দীর্ঘ পরিসরের শব্দ প্রস্তুতকারি যন্ত্র ব্যবহার করবে। নেটওয়ার্কের মূল উপাদানগুলি এই বছরের শেষের দিকে চালু করা হবে। 

আঞ্চলিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান ডিমোন্সথেনিস কামারজিওস, বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমাদের কাজ হলো অভিবাসীদের অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা। আর এটি করার জন্য আমাদের আধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন।’

ইউরোপের আশেপাশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গবেষকরা বেসরকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করে ভবিষ্যত নজরদারি এবং যাচাইকরণ প্রযুক্তি তৈরি করেছেন এবং তারা গ্রিক সীমান্তে এক ডজনেরও বেশি প্রকল্প পরীক্ষা করেছেন। পূর্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি হাঙ্গেরি, লাটভিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলেও পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকরা গত পাঁচ বছরে অভিবাসন কৌশলটি অনেকবেশি আক্রমণাত্মক করে ফেলেছেন। অভিবাসীদের আটকানো জন্য ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ইইউ সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্সকে সমন্বয় ব্যবস্থা থেকে একটি সম্পূর্ণ বহুজাতিক সুরক্ষা সংস্থায় রূপান্তরিত করতে জোর দিয়েছেন। 

তবে আঞ্চলিক অভিবাসন সংক্রান্ত চুক্তি ইইউকে প্রতিবেশীদের কাছে রাজনৈতিক চাপের মুখে ফেলেছে। 

এই মাসের শুরুতে কয়েক হাজার অভিবাসী একদিনেই মরক্কো থেকে স্পেনীয় ছিটমহল পেরিয়ে স্পেনে প্রবেশ করেছিল যা স্পেনকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। গ্রিক-তুর্কি সীমান্তে অনুরূপ সঙ্কট উদ্ভূত হয়েছিল এবং গত বছর তিন সপ্তাহ অবধি ছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অবৈধভাবে পারাপারের জন্য ইউরোপের সবচেয়ে সাধারণ পথ লেসবোস এবং অন্যান্য গ্রিগ দ্বীপপুঞ্জে অভিবাসীদের পৌঁছানো বন্ধ করতে গ্রীক ইইউকে তার আঞ্চলিক জলসীমার বাইরে ফ্রন্টেক্সকে টহল দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে যে, উদীয়মান প্রযুক্তি যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য আরও চরম কষ্টের হবে ।

ডিজিটাল রাইটস গ্রুপের ইডিআরআই এর ইলা জাকুবউস্কা বিরোধিতা করে বলছেন যে, ‘ইইউ কর্মকর্তারা অভিবাসনের জটিল বিষয়গুলো মোকাবেলায় নৈতিক বিবেচনার দিক থেকে দূরে গিয়ে ‘প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান’ গ্রহণ করছেন।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এটি উদ্বেগজনক যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিলগুলি ব্যয়বহুল এইসব প্রযুক্তিতে যে টাকা ব্যয় করছেন তা মূলত মানুষকে অপরাধীকরণ ও অমানবিক আচরণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, প্রাচীর এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অভিবাসীদের প্রবেশের ঘটনাকে একটি অচল অবস্থানে নিয়ে এসেছে। 

এখানকার বাসিন্দা পানাজিওটিস কিরগিয়ানিস বলেন ‘আমরা তাদেরকে(অভিবাসীদেরকে) ৮০ বা ১০০ জনের দলে গ্রামে ঢুকতে দেখতে অভ্যস্ত। আমরা ভয় পাইনি, কারণ তারা এখানে বসতি স্থাপন করতে চায় না। আমাদের চারপাশে যা ঘটছে সেগুলি আসলে আমাদের সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়।’

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here