তিউনিসিয়ার অভিবাসীদের ঢলে বেসামাল ইতালি

0
1185

ইতালির বন্দরসীমান্তুগুলো দিয়ে গত আট মাসে যতসংখ্যক অভিবাসী দেশটিতে ঢুকেছে সে সংখ্যা গেল বছরে যতসংখ্যক অভিবাসী দেশটিতে প্রবেশ করেছে তার চেয়েও দ্বিগুণ। সম্প্রতি তিউনিসিয়ায় চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে শত শত মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করছে।

তিউনিসিয়া থেকে অভিবাসীদের এই স্রোতই মূলত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতালির জন্য। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা সামনের দিনগুলোতে তিউনিসিয়া থেকে ইতালিতে আরো ব্যাপকমাত্রায় অভিবাসীর ঢল আসবে।


দুই সপ্তাহ আগে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সংসদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। সাইয়েদ এখনও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেননি এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে সমর্থ হননি। এরকম রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত, তিউনিসিয়া থেকে ইতালিগামী অভিবাসীদের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় ।


ল্যাম্পেডুসা থেকে পরিচালিত ‘মেডিটেরিয়ান হোপ’ নামের একটি সংগঠনের নেতা ফ্রান্সেসকো পিয়োবিচি সংবাদমাধ্যম ‘ইয়োরোনিউজ’কে বলেন ‘স্পষ্টত আমরা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে ২০১১ সালের ঘটনার (আরব বসন্ত) কোনো তুলনা করতে পারছি না।’

তিনি আরো যোগ করেন, ‘এ ঘটনা আরব বসন্তের (২০১১ সাল) এর মতো নয়। ওই সময় ‘বিপ্লব’ এর মাধ্যমে পুরো দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল, যা হাজার হাজার মানুষকে চলে যেতে প্ররোচিত করেছিল। যদিও এখন ভিন্ন বাস্তবতা। কোভিড-১৯ মহামারি দেশকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। এছাড়া রাজনৈতিক সংকটও বাগড়া বাঁধিয়ে চলেছে।’


‘মেডিটেরিয়ান হোপ’ জানাচ্ছে, তিউনিসিয়া ছেড়ে যারা যাচ্ছেন এবং ল্যাম্পেডুসায় পৌঁচ্ছাছেন, তাদের আনুমানিক সংখ্যা গত জুলাই থেকে ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

এএফপি নিউজ এজেন্সি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, গত বছর যে পরিমাণ মানুষ তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপের দিকে গমণ করেছেন, সে সংখ্যা ২০১১ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ!

এদিকে ইতালি এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন সম্প্রতি ভুমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দিকে অভিবাসন রোধের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এসব দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


এছাড়া এককভাবে তিউনিসিয়া থেকে অভিবাসন ঠেকাতে ইতালি উল্লেখযোগ্য কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। এর মধ্যে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ডের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সহায়তা জন্য ২০২০ সালে রোম দেশটিকে ১ কোটি ১০ লাখ ইউরো সহায়তা দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল।


অন্যদিকে অভিবাসন স্রোত কমেনি উল্লেখ করে তিউনিসিয়ার সংসদ সদস্য মাজদি কারাবি বলেছেন, ‘ওই অর্থ কীভাবে খরচ করা হয়েছিল তা পরিস্কার নয়।’ তার মতে, ‘পূর্ববর্তী সরকারের উচিৎ ছিল তিউনিসিয়ার অর্থনীতির গতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা। তারা দেশের যুব সমাজ কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ আসলে সবকিছুই এখন নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতি কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন তার ওপর। তিউনিসিয়া চাইলেই সমঝোতায় পৌঁছতে পারে এবং ইতালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারে। এর ফলে অভিবাসন সংকট মোকাবিলা আরো সহজতর হবে, বিপরীতে এটি যদি ব্যর্থ হয় তাহলে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ধাবিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here