পাচারের শিকার ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দিতে উচ্চ আদালতের আদেশ

0
747
যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি
যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি

হাজার হাজার পাচারের শিকার অভিবাসী যারা বছরের পর বছর অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আটকে আছে তাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত- এমনই একটি যুগান্তকারী আদেশ দিয়েছে দেশটির উচ্চ আদালত।

এই আদেশ ঘোষণার আগে উচ্চ আদালতের বিচারক বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার পাচারের শিকার বিদেশিদেরকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠালে সেখানে তারা একই অপরাধীদের দ্বারা আবার পাচারের ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

এই কারণে, অনেকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় বা মানবিক সুরক্ষার জন্য আবেদন করে থাকে। যুক্তরাজ্যে থাকার জন্য আবেদন করার পর হোম অফিস এবং আদালতের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণের আগ পর্যন্ত তাদেরকে কয়েক বছর ধরে আইনি ঝামেলায় থাকতে হয়।

সেই সময়ের মধ্যে তারা কোনো চাকরি পায় না, পড়াশুনার সুযোগ পায় না বা মৌলিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। অনেকে মনে করেন, এই অপেক্ষমান সময়ে পাচার হওয়ার কারণে তাদের যে মানসিক ট্রমা তৈরি হয়, তা নিরাময় করে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালত আদেশ দেয় যে, পাচারের শিকার ব্যক্তিরা যারা দেশটিতে থাকার জন্য অনুমতি চেয়েছে তাদের আবেদন সর্বজনীনভাবে মঞ্জুর করতে হবে। এই আদেশ পাচারের শিকার হয়েছে বলে প্রমাণিত এমন হাজার হাজার ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হবে। যদি হোম অফিস আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তাকে অবশ্যই ১৯ অক্টোবরের মধ্যে অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।

এই আদেশের ফলে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ৩৩ বছর বয়সী ভিয়েতনামের এক নারী। পাচারকারীরা ২০১৬ সালে প্রায় ছয় মাস ভিয়েতনামের ভিন সিটিতে তাকে যৌনকর্মে বাধ্য করেছিল। এছাড়াও পাচারকারীরা তাকে ট্রাকের পেছনে লুকিয়ে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ফ্রান্স সহ বেশ কয়েকটি দেশ অতিক্রম করে ২০১৬ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসে।

নভেম্বর ২০১৬ থেকে মার্চ ২০১৮ এর মধ্যে তাকে পতিতালয়ে এবং গাঁজা উৎপাদনে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০১৮ এর এপ্রিলে তাকে পাচারের শিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তবুও অক্টোবর ২০১৮ তে তার বিরুদ্ধে গাঁজা উৎপাদনের অভিযোগ আনা হয় এবং প্রেস্টন ক্রাউন কোর্টে দোষী সাব্যস্ত করে ২৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের মে মাসে তার আইনজীবীরা তাকে আবারো একজন পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসেবে মূল্যায়নের জন্য রেফার করে কিন্তু হোম অফিস বলেছিল যে তাদের সিস্টেমে তার মামলার কোনো রেকর্ড নেই। জুলাই ২০১৯ সালে হোম অফিস তার পাচারের রেকর্ড খুঁজে পেয়েছিল কিন্তু অক্টোবর ২০১৯ সালে ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে আটকে রেখেছিল।

যদিও তাকে স্বরাষ্ট্র দফতর পাচারের শিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার আশ্রয়ের আবেদন চলছে, তাই তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন।

তার পাচারের অভিজ্ঞতার ভয়ংকর পরিস্থিতি আদালতে জমা দেওয়া প্রমাণে তুলে ধরা হয়েছিল। তিনি উদ্বেগ, হতাশাসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

তার রায়ে বিচারপতি লিন্ডেন বলেছেন: ‘দাবিদারকে আধুনিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করার অর্থ হল- তাকে ‘অভিবাসন আইন ২০১৪’ এর অধীনে বর্ণিত তথাকথিত বৈরী পরিবেশের মধ্যে ঠেলে দেওয়া।’

ভুক্তভোগীর আইনজীবী, আহমদ আয়িদ এই আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন: ‘আমরা খুশি যে আমাদের মক্কেল এবং পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া অন্যদেরকে এই শোষণ ও আইনি অস্থিরতাপূর্ণ ‘অর্ধ-বিশ্বে’ থাকতে হবে না।’

‘পাচারের শিকার ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার জন্য ‘পুনরুদ্ধার’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণের ভূমিকায় কাজ করে। এবং এটি ভুক্তভোগীদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের মক্কেল এবং অন্যান্য বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অবশেষে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কাজ করার অধিকার থাকবে।’

স্বরাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেছেন: ‘রায়ে বলা হয়নি যে আধুনিক দাসত্বের শিকার সকলকে মুক্তি দেওয়া উচিত, কিন্তু যখন একজন ভুক্তভোগী পুনরায় পাচার হওয়ার আশঙ্কার ভিত্তিতে আশ্রয় দাবী করছে তখন এটি প্রয়োজন হতে পারে। আমরা এই রায়ের প্রভাবগুলি সাবধানে বিবেচনা করছি। আপিল করা বা না করার সিদ্ধান্ত যথাসময়ে নেওয়া হবে।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here