রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নমনীয় মিয়ানমার: আশাবাদী বাংলাদেশ

0
1097

গত তিন বছরে মিয়ানমার একটিও রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি, অন্যদিকে রাখাইন প্রদেশে তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা দুইবার ব্যর্থ হয়েছে।

তবে এই বছরের মে থেকে বহুল কাঙ্ক্ষিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাাপারে ঢাকা আশাবাদী। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে গতকাল অনুষ্ঠিত সচিব পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়ালকে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নেপিডো তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নমনীয়তা দেখিয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘কূটনৈতিক ভাষায়, আমি বলতে পারি-মে মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করার ব্যাপারে আমরা সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী।’ কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।

চীনের মধ্যস্থতায় গতকাল বিকেলে ৯০ মিনিটের ভার্চুয়াল ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই এবং মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপমন্ত্রী হাও দো সুয়ান বৈঠকে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন।

তিন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর সরকারি পর্যায়ে সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ঢাকা বছরের প্রথম প্রান্তিকেই প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু মিয়ানমার বলেছে কৌশলগত কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার আয়োজন করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা বলেছিলাম সেকেন্ড কোয়ার্টারে এটি করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারও ঢাকার প্রস্তাব অনুযায়ী সেকেন্ড কোয়ার্টারে কাজ শুরু সম্পর্কে তাদের নমনীয়তা দেখিয়েছিল। তবে সচিব বলেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য প্রচুর বিষয় রয়েছে, তবে ‘আমরা আশা নিয়ে কাজ করতে চাই’।
মাসুদ বলেন, ঢাকা গ্রামভিত্তিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রস্তাব করেছে যাতে রোহিঙ্গারা তাদের পরিচিত প্রতিবেশীদের সঙ্গে একসাথে দেশে ফিরে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারে। তবে, মিয়ানমারের পক্ষ জানিয়েছে তারা কেবল যাচাই করা রোহিঙ্গাদের দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। সচিব বলেন, মিয়ানমার গ্রাম ভিত্তিক প্রত্যাবাসন সম্পর্কে ঢাকার প্রস্তাবকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেনি। তারা বলেছে, বিষয়টি বিবেচনা করবে, তবে চীনা পক্ষ ঢাকার যুক্তি বুঝতে পেরেছে।তিনি বলেন, মিয়ানমারকে তাদের রোহিঙ্গা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে খুব ধীর বলে মনে হয়েছে বলে ঢাকা দ্রুত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক তথ্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে।৮ লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে নেপিডো এ পর্যন্ত মাত্র ৪২ হাজার বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই করেছে


মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হওয়ার সময় মিয়ানমার ও চীন উভয়ই রাখাইনে জাতিসংঘ, ভারত, জাপান এবং আশিয়ান দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিত রাখার প্রস্তাবের বিষয়ে ঢাকার প্রস্তাব সম্পর্কে ইতিবাচকতা দেখিয়েছে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে আস্থা তৈরি করতে রাখাইন রাজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঢাকাও মিয়ানমারকে কঠোরভাবে চাপ দিয়েছে। সচিব বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবক প্রত্যাবাসন করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ, তাই রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরির বিকল্প নেই।

গতকালের বৈঠকের সময় সচিব বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তারা রোডম্যাপ তৈরি করেছে। রোডম্যাপের আওতায় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে পরবর্তী কার্যনির্বাহী বৈঠক আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর পরে একই মাসে চীনের মধ্যস্থতায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপরে, পূর্ববর্তী ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের সময় যেকোনও অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনার জন্য মার্চ বা এপ্রিল মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করেছে এবং তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সামরিক বাহিনীর অভিযানের পরে থেকে সেখানে এসে পৌঁছেছিল। এ ঘটনাকে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন ‘জাতিগত নিধনের সুস্পষ্ট উদাহরণ’ এবং ‘গণহত্যা’ বলে অবহিত করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here