অভিবাসন কর্মকর্তা হিসেবে ১৮ বছর চাকরির পর জানা গেল তিনি ‘অবৈধ’ অভিবাসী!

0
764
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্কমর্তা অবৈধ অভিবাসী
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্কমর্তা অবৈধ অভিবাসী

আষাঢ়ে গল্প মনে হলেও এটি একটি সত্য ঘটনা। কল্পনা করুন যে, একজন মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তা, যিনি মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এত বছর পর এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, আসলেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ‘বৈধভাবে’ বসবাস করছেন না।

প্রথমে নাবিক হিসেবে চার বছর এবং তারপর অভিবাসন কর্মকর্তা হিসেবে ১৮ বছর- সবমিলিয়ে প্রায় ২৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা করার পরও দেশটিতে বসবাসের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ টেক্সাসের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে এমন ঘটনাই ঘটেছে, যিনি কিনা সংবাদমাধ্যম এনপিআর এর প্রতিবেদক জন বার্নেট এর কাছে এমন অভূতপূর্ব গল্প বলে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছেন।

১০ লাখেরও বেশি বিদেশী বংশোদ্ভূত মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, যারা অভিবাসন বিষয়ক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অপেক্ষায় রয়েছেন । যদিও তাদের বেশিরভাগেরই ইতিহাস ২৫ বছর ধরে চাকরি করা রাউল রদ্রিগেজের মতো নয়।

রদ্রিগেজের দুঃস্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের এমন একদিন, যেদিন তিনি দক্ষিণ টেক্সাসের একটি কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন স্টেশনে কাজ করছিলেন। হঠাৎ দুইজন ম্যানেজার এসে তাকে বন্দুক ও ব্যাজ সমর্পণ করতে বলেন। কারণ তারা জানতে পেরেছিলেন যে, রদ্রিগেজ একজন অননুমোদিত অভিবাসী । তারা এও জেনেছিল যে, রদ্রিগেজের আসলে একটি মেক্সিকান জন্মসনদ ছিল এবং তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে এতকাল মার্কিন নাগরিক বলে দাবি করে আসছিলেন।

রাউল রুদ্রিগেজ:  আমি ভেবেছিলাম একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে যা করা দরকার – সেনাবাহিনীতে যোগদান, ভোট দেওয়া, বিচারকার্য সবই আমি করেছি। আমি সেই সব কাজ করেছি বলেই হয়তো এখন আমাকে এর জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

জন বার্নেট: ৫৩ বছর বয়সী রদ্রিগেজ কখনই জানতেন না, তিনি মেক্সিকোর মাতামোরোসের কাছে একটি খামারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কয়েক বছর আগ পর্যন্তও তিনি তার বাবার মুখোমুখি হননি, তিনি জানতে পেরেছিলেন, তার পরিবার তাকে শিশু হিসেবে সীমান্তের ওপারে নিয়ে গিয়েছিল এবং একটি মিথ্যা জন্মসনদের জন্য এক ধাত্রীকে অর্থ প্রদান করেছিল। তার পরিবার সরকারকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এই জন্মসনদটি নিয়েছিলেন, যাতে সে টেক্সাসে বসবাস করতে পারে এবং স্কুলে যেতে পারে। রদ্রিগেজ জানিয়েছেন, যখন তাকে সিবিপি কর্তৃক বহিষ্কার করা হয়েছিল, তখন তিনি তার সব বন্ধু এবং সহকর্মীদের হারিয়েছিলেন।

রুদ্রিগেজ: তারা এখন আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে, তারা শুধু দূর থেকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

বার্নেট: রাউল রদ্রিগেজ ব্রিজ এজেন্টের নীল ইউনিফর্ম পরতেন এবং একজন ভালো কর্মী ছিলেন। তিনি একবার মানব চোরাচালান চক্রের বিরুদ্ধে গোপন অভিযান চালানোর জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন।

আরো পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি ডেলিভারিম্যানের হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
যুক্তরাষ্ট্রর কারাগারে ছয় অভিবাসী শিশুর মৃত্যু হযেছিল যেভাবে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে কারণে লাখো অভিবাসী সৈনিক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল

বার্নেট: রুদ্রিগেজের অ্যাটর্নি, জাইম ডাইজ বলছেন- মার্কিন নাগরিকত্ব এবং অভিবাসন পরিষেবা কর্তৃক নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ডের জন্য রদ্রিগেজের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অফিস নাকি বলেছে, তিনি একজন আমেরিকান হওয়ার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন, এবং এটা কোন যুক্তি নয় যে, তিনি কখনোই জানতেন না যে, তিনি মার্কিন নাগরিক নন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট তার মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে যে, এটি একজন কর্মীর ব্যক্তিগত বিষয়।

বার্নেট: রদ্রিগেজ বর্ডার প্যাট্রোল চেকপয়েন্টের উত্তরে ভ্রমণ করতে পারেন না, যার অর্থ তিনি রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালি ছেড়ে যেতে পারেন না বা চাকরির জন্য অন্য কোথাও যাওয়ার আবেদন করতে পারেন না। তাই তিনি সান বেনিতো শহরের বাইরে তার ছোট্ট খামারে দিন কাটান, গরু, ভেড়া এবং মুরগি পালন করেন। তিনি তার স্ত্রী অনিতার সঙ্গে থাকেন, যিনি দুর্ভাগ্যক্রমে একই ইমিগ্রেশন অফিসে কাজ করেন, যেখান থেকে রুদ্রিগেজকে বৈধতা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। মামলায় হেরে গেলে এবং নির্বাসিত হলে তাদের কী হবে তিনি সেটা ভাবতেই ভয় পাচ্ছেন।

রদ্রিগেজ: মেক্সিকোতে আমার অনেক শত্রু আছে। আমি কার্টেলদের সঙ্গে গোপন কাজ করেছি – অনেক নির্বাসন, অনেক আশ্রয়ের মামলা, অনেক ভিসা বাতিল করেছি।

বার্নেট: রদ্রিগেজের অস্বাভাবিক নির্বাসন মামলাটি রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালিতে ব্যাপক মনোযোগ পেয়েছে। এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা, যখন দেশের একজন প্রহরী হঠাৎ করে একজন অননুমোদিত অভিবাসী হয়ে ওঠে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রদ্রিগেজকে বিদ্রূপ করে অনেক মন্তব্য করা হয়।

রদ্রিগেজ: তারা আমাকে অভিশাপ দেয়। তারা এফ শব্দটি ব্যবহার করে । আসলেই তো তাই, আমি যা করেছি – আমার জন্য, জনগনের জন্য, তার ‘প্রাপ্য’ পেয়ে যাচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here