অভিবাসী কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

0
835
অভিবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা

সাধারণত, অভিবাসী কর্মীরা অন্যদের তুলনায় মানসিক সংকটে বেশি ভোগেন। সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্র্যাকের একটি জরিপে দেখো গেছে যে, ৭৪ শতাংশ অভিবাসী কর্মী মানসিক সমস্যায় থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক সচেতনতাও কম। যার ফলে, অনেকে হতাশাগ্রস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নেন।

অভিবাসী কর্মীরা সাধারণত যে সকল মানসিক চাপ, বিপর্যয় বা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, সেগুলো হলো:

পাওনাদারের ঋণ পরিশোধের চিন্তা: বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক অভিবাসন ব্যায় মেটানোর জন্য ধার-দেনা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। আবার অনেকে সম্পত্তি বন্ধক রেখে টাকা সংগ্রহ করেন। তাই বিদেশে গিয়ে এই ঋণের টাকা সময়মতো পরিশোধ করাটা বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক ঋণ পরিশোধের চিন্তায় মানসিক চাপে থাকেন।

দেশে ফেলে আসা পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তা করা: একজন অভিবাসী কর্মী বিদেশে যাবার পর পরই নিজ পরিবার ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণে মানসিকভাবে প্রচণ্ড অস্থিরতায় ভোগেন। এসময়ে তাদের কিছু ভালো লাগে না ও দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা হয়। এ ধরনের মানসিক অবস্থাকে গৃহপীড়া বা হোমসিকনেস বলে।

এছাড়াও-

১.চাকরি পাওয়া বা স্থায়ীকরণের অনিশ্চয়তা।

২.নিয়োগপত্র ওয়ার্ক পারমিট প্রাপ্তিতে বা চাকরির মেয়াদ বর্ধিতকরণে অনিশ্চয়তা।

৩.দুর্যোগ বা মহামারির কারণে চলাচলে সীমাবদ্ধতা বা ঘরবন্দি থাকায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়া।

৪.নিয়মিত মজুরি বা বেতন না পাওয়া ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পতিত হওয়া।

৫.অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান বা নেশায় আসক্ত হওয়া।

৬.খাদ্য ঘাটতিতে পড়া বা সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য না পাওয়ায় মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়া ।

৭.মহামারি বা দুর্যোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া।

৮.বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইলে বেশি সময় কাটানো বা আসক্তি হওয়া ও গুজবে বিশ্বাস করা।

মানসিক চাপ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়:

একজন অভিবাসী কর্মীকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন-

১.নির্দিষ্ট বিরতিতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলা বা যোগাযোগ করে শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানানো।

২.পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম করা।

৩. সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা ও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

৪.নিয়মিত ব্যায়াম ও মেডিটেশন বা ধ্যান করা।

৫. সহকর্মীদের সঙ্গে খেলাধূলা করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইল ফোনের ব্যবহার পরিমিত করা।

৬.উৎসাহ প্রদায়ক এবং ইতিবাচক সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করুন। তাদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটান।

৭. গুজবে কান না দেয়া ও যে কোনো তথ্যের অনুমোদিত উৎস সম্পর্কে জেনে বিশ্বাস করা বা মেনে চলা।

৮. পরিবারের ও বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে দুর্যোগ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা করা।

৯. সঞ্চিত অর্থের সঠিক ব্যবহার ও অপ্রয়োজনীয় ব্যায় পরিহার করা।

১০. নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজ ধর্ম অনুসারে নিয়মিত প্রার্থনা করা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।

এছাড়াও প্রবাস জীবনে একাকিত্ব এড়ানোর জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া ও সুস্থ বিনোদনে অংশ নেয়া যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসটি হলো নিজের সমস্যা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা। সর্বোপরি, একটি সুন্দর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা।

এভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে অভিবাসী কর্মীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। আর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা গেলে কাজের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে, অভিবাসনের মূল লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব হবে।

লেখক: শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক উন্নয়ন কর্মী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here