নিজ দল ক্ষমতায় থাকাকালে কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছিলেন ডেনমার্কের সাবেক অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ইনগার স্টোজবার্গ। আশ্রয়প্রার্থী দম্পতিদের অবৈধভাবে পৃথক করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হয়েছে।
ডেনমার্কের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে সম্ভাব্য অভিবাসীদের দূরে থাকার সতর্কবার্তা দিয়ে লেবাননের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ‘অবাঞ্চিত’ অভিবাসীদের ড্যানিশ দ্বীপে রাখার পরিকল্পনা এবং কেক কেটে অভিবাসনবিরোধী নীতি পাসের উদযাপন করে রীতিমত বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন ইনগার স্টোজবার্গ।
শেষ পর্যন্ত ড্যানিশ এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ালো। অভিবাসনপ্রত্যাশী দম্পতিদের অবৈধভাবে পৃথক করার আদেশ দেয়ার অভিযোগে কোপেনহেগেনে একটি বিরল অভিশংসনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া হাই প্রোফাইল এই মামলাটি ১৮৪৯ সালে ডেনমার্কে সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে ষষ্টতম মামলা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল ও সংসদ সদস্যদের দ্বারা নিযুক্ত যৌথ প্যানেলের মাধ্যমে গঠিত কমিটি স্টোজবার্গের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
দোষী সাব্যস্ত হলে মিসেস স্টোজবার্গের জেল-জরিমানা হতে পারে এবং পার্লামেন্ট তাকে আইন প্রণেতা হিসেবে অপসারণের জন্য ভোট দিতে পারেন। আইনি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিসেস স্টোজবার্গের অভিশংসন বিচার প্রক্রিয়া ডেনমার্কে একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে হয়েছে।
মামলার নথিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী থাকাকালে মিসেস স্টোজবার্গ একটি বিবৃতি জারি করেছিলেন। ড্যানিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, আশ্রয় শিবিরে তথাকথিত ‘বাল্য বিবাহ’ নিয়ে তিনি কট্টর অবস্থান নিয়েছিলেন। যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে, এমনকি তাদের সন্তান থাকলেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর ব্যাপারে রায় দিয়েছিলেন মিসেস স্টোজবার্গ। প্রায় ২৩ জন দম্পতি, যাদের মধ্যে অনেকেই সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে ডেনমার্কে পালিয়ে এসেছিলেন। যাদের কিনা পরবর্তীতে অভিবাসন কর্মকর্তারা পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।
‘তাদের অবশ্যই আলাদা হতে হবে’-ড্যানিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের মুখোমুখি হয়ে ঔদ্ধত্যের স্বরে এমনটাই বলেছিলেন স্টোজবার্গ। তিনি বলেছিলেন, ‘কারণ আমি এটা মেনে নেবো না যে, আমাদের সিস্টেমে জবরদস্তির উদাহরণ থাকতে পারে।’ স্টোজবার্গ আরো যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি আসলে দম্পতিদের আলাদা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো আদেশ জারি করেননি।
১৭ বছর বয়সী গর্ভবতী একজন নারী ও ২৬ বছর বয়সী এক দম্পতি তাদেরকে আলাদা করে দেয়ার বিরুদ্ধে ড্যানিশ পার্লামেন্টের ন্যায়পালের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন । পরবর্তীতে এই নীতিকে অবৈধ বলে রায় দেওয়া হয়েছিল। ড্যানিশ গণমাধ্যম পলিটিকেন জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে সঙ্গীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আরেক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিলো।
আনীত অভিযোগে বলা হচ্ছে, মিস স্টোজবার্গ একইসঙ্গে ডেনমার্কের আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে ইউরোপীয়ান কনভেনশন ভঙ্গ করেছেন। কারণ তার দপ্তর আলাদাভাবে প্রতিটি মামলার মূল্যায়ন করেনি। অভিযোগে আরো বলা হয়, তিনি ২০১৭ সালে চারটি অনুষ্ঠানে সংসদীয় নীতিনির্ধারণের সময় বিভ্রান্তিকর বা ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।
এদিকে আদালতে স্টোজবার্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার বিষয়টিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, অভিবাসন বিরোধী স্টোজবার্গের বিরুদ্ধে যদি আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা না যায় বা যদি অব্যাহতি পান, তাহলে তিনি মহা তারকায় পরিণত হবেন, যা কিনা ডেনমার্কের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য খড়গ হয়ে উঠবে।
এর আগে ২০১৬ সালে ড্যানিশ শহরে একটি পাবলিক ডে কেয়ার সেন্টার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতি সম্মান জানিয়ে শুয়োরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করেছে বলে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় স্টোজবার্গ সমালোচিত হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, অভিসংশনের বিচারের আশঙ্কা প্রকাশ হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি লিবারেল পার্টির উপনেতার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস