হাজার হাজার দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। ফলস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ হারাচ্ছেন। এসব কর্মীরা কোন না কোনো ত্রুটির কারণে তাদের ভিসার শর্ত পূরণ করতে অক্ষম হচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই দক্ষ জনবল সংকটে জর্জরিত। জাতীয় দক্ষতা কমিশনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচটি পেশার মধ্যে একটি পেশায় যোগ্য কর্মীর সংকট রয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম ফিনান্সিয়াল রিভিউকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আটকে পড়া এক অভিবাসী আলী রিয়াদ বলেন, তিনি ৪৮৯ ভিসাধারী (অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষ কাজের আঞ্চলিক ভিসা ক্যাটাগরি), প্রায় ১৮ মাস ইউরোপে আটকা পড়েছেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের তার আর কোন সুযোগ নেই।

হংকংয়ে বসবাসকারী ৪৮৯ ভিসাধারী আরেক ভূক্তভোগী পেনি বলেন, তার অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অনুরোধটি ১২ বার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তিনি নিবন্ধিত নার্স হিসাবে চাকরি পেয়েছিলেন তাসমানিয়া রাজ্যে- যেখানে নার্সিং পেশায় কর্মী সংকট রয়েছে।
‘আমি ২০২০ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের পরিকল্পনা করছিলাম। আমি ইতোমধ্যেই আমার টিকিট কিনে ফেলেছিলাম এবং ডিসেম্বর ২০১৯ এ আমার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি’- বলছিলেন পেনি । তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের চেষ্টায় ২০ হাজার ডলারেরও বেশি খরচ করেছেন।
তিনি বিমর্ষ হয়ে বলতে থাকেন ‘আমি এখন আমার চাকরি ছাড়াই হংকংয়ে আটকে আছি এবং আমার অর্ধেক ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অস্ট্রেলিয়ায় রেখেছি -আমি আমার ভবিষ্যতের জন্য আর অন্য কোনো পরিকল্পনা করতে পারছি না।’
মূলত, দক্ষ আঞ্চলিক ভিসা কর্মসূচির লক্ষ্য হল- আঞ্চলিক এলাকায় নিয়োগকর্তাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা, যেখানে জাতীয় দক্ষ পেশার তালিকায় থাকা আইটি এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগ করা কঠিন।
ভ্রমণ ছাড়ের জন্য পেনির অনুরোধ তার ১৩ তম প্রচেষ্টায় অনুমোদিত হয়েছিল, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ক্যাপের (অস্ট্রেলিয়ায় আগত আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যার সীমাবদ্ধতা) কারণে তিনি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট বুক করতে পারবেন না।
ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালের আগস্টে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসের যোগ্যতা অর্জনের শর্ত হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
৪৮৯ এবং ৪৯১ ভিসাধারী অভিবাসীরা কেবল আঞ্চলিক অস্ট্রেলিয়ায় কমপক্ষে দুই বছর বসবাস করলেই বাসিন্দা হওয়ার যোগ্য হন।

ধারাবাহিকভাবে ভিসার অনুমোদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে
যদিও কিছু ভিসাধারী অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু ছাড়পত্র পাওয়া কঠিন।
রিয়াদ বলছিলেন, যে কিছু সদস্য আছেন, যারা ৩০ বারেরও বেশি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন।
এই আইসিটি কর্মী বলেন, ‘সীমান্ত বন্ধ হওয়ার পর থেকে, আমরা প্রত্যেকেই অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু আমাদের ভ্রমণ ছাড়ের জন্য আবেদন করতে হবে এবং এই ছাড়পত্রগুলি ধারাবাহিকভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। রিয়াদ বলেন, ‘ছাড়ত্রের অনুরোধগুলি সাধারণত প্রত্যাখ্যান করা হয় কারণ মানুষের দক্ষতা নিখুঁত বলে বিবেচিত হয় না।
রিয়াদের ভিসার মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তার মানে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসের যোগ্য নন কারণ তাকে ডারউইনে চাকরি নেওয়ার জন্য ভ্রমণ ছাড় দেওয়া হয়নি।
স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্যমতে, ৪৮৬ বা ৪৯১ ভিসাধারী এমন আট হাজার চারশো ৬৩ জন আছেন যারা নিশ্চিত চাকরি নিয়ে আবেদন ফি ও ভ্রমণ ব্যায়ে হাজার হাজার অর্থ খরচ করেও অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারছেন না।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, মরিসন সরকার কিছু দক্ষ ভিসাধারীদের চাকরি ও আবাসনের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে সাময়িক শিথিলতা ঘোষণা করে। কিন্তু এই ছাড়গুলি অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থাকা হাজার হাজার অভিবাসীদের সাহায্য করার জন্য খুব একটা সহায়ক নয়। যেমনটি পেনি এবং রিয়াদের মতো চার হাজার ছয়শো দক্ষ অভিবাসী সক্রিয় ভিসা সঙ্গে নিয়েও বিদেশে আটকে আছেন।
ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি
গত সপ্তাহে, গ্রিনস ঘোষণা করেছিল যে তারা বিদেশে আটকে থাকা অনুমোদিত অভিবাসীদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বা পুনরুদ্ধার করতে আগামী মাসে সিনেটে আইন প্রবর্তন করবে।
পার্টির অভিবাসন মুখপাত্র নিক ম্যাককিম বলেন যে, এটি অন্যান্য ভিসা বিভাগেও জাতীয় দক্ষতার ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করবে।
তবে, স্বরাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সরকার ‘অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য ভিসা ব্যবস্থাপনার পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিদ্যমান ৪৮৯ বা ৪৯১ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
সূত্র: ফিনান্সিয়াল রিভিউ