ভোর
মা পাখি ঘুম ভাঙালেন সন্তানদের এবং জানালেন এক অদ্ভুত খবর…
– ওঠো আমার যাদুর পাখিরা। আর শোন, আজ থেকে একটা নতুন জীবন আমাদের শুরু হতে যাচ্ছে। আমাদের এই ভূমি আর আমাদের নেই। আমরা ভূমিহারা হয়ে গেছি।
সন্তানেরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। যেন তারা এক অদ্ভুতুড়ে গল্প শুনছে যা তারা আগে কখনো শোণে নি। তারা জিজ্ঞেস করলো…
– কেন?
– আমাদেরকে সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছে। আমাদের এখন থেকে এই মাটির প্রতি আর অধিকার নেই! আমরা আর আজ থেকে এদেশের নাগরিক নই! চারদিকের সব গাছগাছালি আজ থেকে আমাদের নিজেদের না।
এক বাচ্চা পাখি জানতে চাইলো…
– আমরা কি দোষ করেছি? আমরা তো কাউকে বিরক্ত করি নি। কারো ঘরে হামলে পড়ি নি।
মা পাখি বলল…
– পৃথিবী এক অদ্ভুত যায়গা। এখানে রাষ্ট্র নামক এক এমন ব্যবস্থা আছে যার কাছে মানুষের মূল্য রাজা মন্ত্রীদের ইচ্ছার সমান!
অন্য এক বাচ্চা পাখি জানতে চাইলো…
– আমাদেরকে কি ওরা খাঁচায় বন্দি করে ফেলবে?
হতাশ মা পাখি বলল…
– আমি জানি না। তবে আমরা অপেক্ষা করবো ঘৃণা নিয়ে আমাদেরকে যারা এমন উদ্ভট ভাগ্যচক্রে ছুঁড়ে ফেলে দিলো তাদের ফরমানের দিকে।
প্রথম বাচ্চা পাখিটি বলল…
– আমাদেরকে কি মেরে ফেলবে?
মা পাখি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
– আমরা কি আর বেঁচে আছি?
দ্বিতীয় বাচ্চা পাখিটি জিজ্ঞাস করলো…
– মা আকাশটা কি আমাদের আছে?
মা পাখিটি ডুকরে উঠে বলল…
– না।
মাছেদের গল্প
পুকুরের মাছেদের মধ্যে হইচই পড়ে গেলো। ছোটাছুটি চলতে লাগলো পালাবার। কিন্তু সীমান্তের সীমাবদ্ধতা তাদেরকে বারবার হুমড়ি খেতে বাধ্য করলো।
– শুনেছ খবরটা?
– হ্যাঁ। এক্ষুনি শুনলাম!
– কখন আসছে?
– এসে গেছে প্রায় পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন জাল হাতে।
– কিছুদিন ধরে শুনছিলাম জাল ফেলে সবাইকে তুলে নিয়ে যাবে!
– হুম। আজ সেই বীভৎস দিন।
– চল পালাই।
– কোথায় পালাবে?
– সবাই পালাচ্ছে!
– লাভ নেই, একটু দেরিতে হলেও ধরা পড়তেই হবে।
– চেষ্টা তো করে দেখি?
– লাভ নেই।
– আমরা তো এই জলাশয়টাকে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আমাদের জন্ম এখানে, এটা আমাদের।
– উঁহু। শুধু জীবনকে ভালোবাসার অধিকার আমাদের দেয়া হয়েছে। পুকুরটা নাকি ওদের। ওরা বলেছে আর থাকতে দেবে না।
[চলবে]