ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার এর করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের দেশের তালিকায় সিরিয়ার পরই রয়েছে কলাম্বিয়া, এ সংখ্যা প্রায় ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন। ৮৯ শতাংশই আবার সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গ্রাম থেকে শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই চার বছর ধরে আইডিএমসির পাবলো কোর্তেজ ফেরনান্দেস গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত প্রবণতার কিছু এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানতে পেরেছেন, নিজের ভিটামাটি ছেড়ে শহরে চলে যাবার পেছনে বেশিরভাগ মানুষই ভবিষ্যতের শঙ্কায় ভোগেন। এ প্রতিবেদক আরো জানতে পেরেছেন, কলাম্বিয়ানদের মধ্যে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হওয়ার উচ্চমাত্রার প্রবণতা দেশটিকে অতিমাত্রিক নগরায়নের দিকে যেতে বাধ্য করছে ।
নিজ গ্রাম থেকে ছেড়ে বাধ্য হয়ে শহরে আসাদের এই তালিকায় রয়েছেন পাওলো। ২০০৫ সালে তিনি তার গ্রাম থেকে কলাম্বিয়ার একটি উপকূলীয় শহরে স্থানান্তরিত হন। কয়েক বছর না যেতে সেখানে নানারকম সঙ্কট শুরু হলে ২০০৮ সালে তিনি পুনরায় বাধ্য হন এ শহর ছেড়েও চলে যেতে। এখানে এসে যা রোজগার করতেন তার অধিকাংশই বাড়িভাড়ার পেছনে চলে যেত। তার ভাষায়, ‘ভাড়া দিয়ে দেয়ার পর খাবার কিনতে পারতাম না’।
পাওলো তার সংগ্রাম থামিয়ে দেননি। পরবর্তীতে তিনি কলাম্বিয়ান সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লিডারশিপ বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন। মূলত, তিনি তার নেতৃত্বগুণকে আরো বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যাতে করে তার মতো আরো যারা বাস্তুচ্যুতের শিকার হয়েছে, তাদের তিনি সহযোগিতা করতে পারেন।
যদিও পাওলোর মতো সবাই এত ভাগ্যবান নন। বেশিরভাগ বাস্তুচ্যুত মানুষই শহরে এসে কঠিন জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। কেউ পরাজিত হয়ে নতুন করে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, কেউবা থমকে আছেন।
মূলত পাবলো কোর্তেজ ফেরনান্দেস তার পর্যবেক্ষণে মোটাদাগে দেখিয়েছেন যে, গ্রামে মানুষ জন্ম নিয়েছেন, যেখানে বেড়ে উঠেছেন, নানা সংঘাত, নৈরাজ্য আর সংহিসতার বলি হয়ে সেই শেঁকড় ছেড়েই লাখো মানুষকে বাধ্য হয়ে বসতভিটা ত্যাগ করতে হচ্ছে। নতুন শহরে, নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার অজানা কৌশল রপ্ত করতে হচ্ছে সাধারণ কলাম্বিয়ানদের। সবকিছু ত্যাগ করে শহরে ছুটে আসার এই যুদ্ধও কী শেষ পর্যন্ত তাদের জীবনের নিশ্চয়তা দেবে নাকি ঠেলে দেবে আরো গভীর কোনো এক অন্ধকার গহীনে।