জলবায়ু পরিবর্তনের ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে ১০০ কোটি শিশু!

0
607
জলবায়ু ঝুঁকি. শিশু- অভিবাসী

জলবায়ু সংকট ও দুষণের প্রভাবে সারা পৃথিবীর মোট ২২০ কোটি শিশুর অর্ধেকই উচ্চ ঝুঁকিতে অবস্থান করছে। ইউনিসেফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি এই অবস্থাকে ‘অকল্পনীয় ভয়ঙ্কর’ পরিস্থিতি বলে অ্যাখ্যায়িত করেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শিশুই কমপক্ষে যেকোনো একটি জলবায়ু প্রভাবজনিত কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তাপদাহ, বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, রোগ, খরা ও বায়ুদুষণ। তবে ৩৩টি দেশের প্রায় একশো কোটি শিশু গুরুতরভাবে তিন থেকে চারটি সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন এবং সাব সাহারান আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ।

জলবায়ু ও পরিবেশগত প্রভাবে শিশুরা যে অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে তা প্রথমবারের মতো হাই-রেজল্যুশন মানচিত্রে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তুলে আনা হয়েছে। এর মধ্যে দারিদ্র এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

ছবি” সংগৃহীত

পরিবেশবাদী কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের প্রথম স্কুল অবরোধের ঘটনার ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইয়ুথ অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে প্রতিবেদনটি প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়। থুনবার্গের সেই প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ঘটনা সারা পৃাথিবীতে আলোড়ন তুলেছিল।

এদিকে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনেরিয়েটা ফোর বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোথায় এবং কীভাবে শিশুরা সংকটের মুখে পড়ছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রথমবারের মতো, (এই প্রতিবেদনে) পাওয়া গেল। সত্যিই এই চিত্র অকল্পনীয় ভয়ংকর।’

‘শিশুরা জলবায়ু ঝুঁকিতে পড়ার জন্য একেবারেই সহজ শিকার। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, তাদের চেয়ে শিশুদের বেশি পানি ও খাবার প্রয়োজন হয়।‘ এছাড়া তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজেদের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও শিশুদের সক্ষমতা কম থাকে।’

প্রতিবেদটিতে নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ ইউএন কপ ২৬ শীর্ষ সম্মেলনসহ প্রতিটি জলবায়ুবিষয়ক আলোচনা এবং সিদ্ধান্তে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফোর বলেন, ‘সিদ্ধান্তগুলি তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। শিশু এবং যুবকদের এই পৃথিবীর উপযুক্ত উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া দরকার যা আমরা সবাই শেয়ার করি।’
অন্যদিকে থুনবার্গ আরো বলেন, ‘আমরা শুধু ভুক্তভোগীই নয় আমরা লড়াইয়েও নেতৃত্ব দিচ্ছি। কিন্তু (এই পৃথিবী) এখন পর্যন্ত জলবায়ু সংকটকে গুরুতর বলে মেনে নিচ্ছে না।’

ছবি: সংগৃহীত

ইউনিসেফের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু সংকটের প্রভাবগুলি ‘গভীরভাবে অসম’ এবং আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, শীর্ষ যে ১০টি দেশ অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, সেই দেশগুলো কিন্তু বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের জন্য মাত্র ০.৫ শতাংশ দায়ী।’

প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, ৯২০ মিলিয়ন শিশু পানির ঘাটতিতে, ৮২০ মিলিয়ন তাপদাহ এবং ৬০০ মিলিয়ন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আসলে মশা ও রোগজীবানু ছড়িয়ে পড়ার জন্য উপযুক্ত জলবায়ু অবস্থা তৈরি হয়েছে, যেকারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আলোচিত পরিবেশবাদী গ্রেটা থুনবার্গ বলেছিলেন: ‘আমরা যথেষ্ট জোর দিয়ে বলতে পারছি না যে, যুক্তরাজ্য সরকারের এখানে কত বড় দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু একটি মিথ্যা কথা প্রচলিত আছে যে, যুক্তরাজ্য জলবায়ুবিষয়ক নেতা এবং তারা ১৯৯০ সাল থেকে তাদের কার্বন নির্গমন ৪০% এরও বেশি হ্রাস করেছে। অথচ আপনি যদি এভিয়েশন, শিপিং, আউটসোর্সিং, আমদানি এবং জৈববস্তুপুঞ্জের মতো জিনিসগুলি অন্তর্ভুক্ত করেন, তাহলে এটি সত্যিই তেমন একটা ভাল দেখায় না। আসলে তারা সৃজনশীল কার্বন বিষয়ক গণিতে খুব ভাল। আমরা চাই তারা কথা বলা বন্ধ করে কাজ শুরু করুক।’

সূত্র: গার্ডিয়ান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here