বছর দুয়েক আগে সুইডেনের লন্ড বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক রোলা এল-হুসেইনি আরব পরিবারগুলোতে অভিবাসনের প্রভাব সম্পর্কে ফেসবুকে একটি আলোচনা দেখেছিলেন। তার ভাষ্যমতে, সেই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানত পুরুষ লেখকরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, স্বদেশ রক্ষার বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে নারীরা প্রবাসে সিরিয়ার পরিবার এবং সমাজের গঠনকে ধ্বংস করছে। তাদের বিশ্বাস ছিল, সিরিয়ান নারীদের অনেকে বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়ায় প্রসঙ্গটি তাদের ইনহিরাফ বা সত্য পথ থেকে বিচ্যুতির দিকে পরিচালিত করছে। যদিও এই ধারণাটি নিয়ে সিরিয়ানদের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান। তবে কিছু পশ্চিমা মন্তব্যকারী বিষয়টিকে নিয়ে নতুন আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেছেন। তারা এটিকে অত্যাচারিত মুসলিম পুরুষদের হাত থেকে নিপীড়িত আরব এবং মুসলিম মহিলাদের বাঁচাতে পশ্চিমা মিশনের অংশ হিসেবে দেখছেন। এটা স্পষ্টভাবেই পশ্চিমা শাসনকেন্দ্রিক পরিস্থিতির বিবরণ।
ফিলিস্তিন-আমেরিকান লেখক লীলা আবু লুঘড তার গ্রন্থ মুসলিম মহিলাদের কী রক্ষা করা দরকার? এ এমন পশ্চিমা মানসিকতার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি ইসলাম থেকে নারীকে উদ্ধারের নামে আরব ও মুসলিম বিশ্বে-আগ্রাসনসহ সকল প্রকার পশ্চিমা হস্তক্ষেপকে ন্যায়সঙ্গত করেছে।
তবে শরণার্থী অনেক নারী, যাদের অধিকাংশই বাল্যবিবাহে আবদ্ধ হয়ে জীবনসঙ্গীর নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ, উন্মুক্ত সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত পৌছানো সুবিধাজনক। বেশিরভাগ আরব দেশে বিবাহ-বিচ্ছেদ বিষয়ক আইনগুলোও প্রায়শই বিবাহবিচ্ছেদের পরে নারীদের গোপনীয়তা বা তাদের সন্তানদের হেফাজতের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক এই আইনগুলি তাদের জন্মভুমিতে থাকাকালীন নারীদের নীরবতা এবং স্থিতিবস্থা গ্রহণের মূল কারণ নয়। যদিও ‘ইসমা’ (বিবাহের চুক্তিপত্রে নারীদের বিবাহ বিচ্ছেদ সূচনার অনুমতি দেয়) ইসলামে অনুমোদিত, তবুও বেশিরভাগ মুসলিম সমাজে এটিকে সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, সেসব নারীদেরকে নৈতিক ও যৌন ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে দেখা হয়।
আরবিভাষী এক নারী আইনজীবী, যিনি সিরিয়ান নারীদের জার্মানিতে তালাক দিতে সহায়তা করেছেন তার ভাষ্যমতে: ‘আমি কখনও দেখিনি একটি জাতীয়তার এত লোক তালাক পেতে চায়, সিরিয়ানদের মত এতটা সামাজিক কাঠামো ভাঙ্গতে দেখিনি।’ শুধু জার্মানিতে নয় এই ঘটনা সুইডেনেও লক্ষ করা যায়। সুইডেন সরকারের নারীবাদী নীতি দ্বারা সিরিয়ান নারীরা ক্রমবর্ধমান ক্ষমতায়িত হয়েছে এবং নিপীড়নকারী জীবনসঙ্গীর থেকে পৃথক হওয়ার দাবিও শুরু করেছে।
নারীদের প্রতি আরো সহানুভুতিশীল শাসনব্যবস্থা গ্রহণের মাধমে সিরিয়ার শরণার্থীরা এমন একটি উদাহরণমূলক অবস্থা তৈরী করছেন, যা পশ্চিমা রাজনীতিক ও বহু আরব বুদ্ধিজীবী অভিজাতরা প্রায়শই অস্বীকার করে।