নির্মমতার হাজারো গল্প জাল বুনে চলেছে বেলারুশিয়ান-পোলিশ সীমান্তে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অসহায় শিশুদের আর্তনাদ। হিমশীতল তুষারে জমে যাওয়া মানুষের নিরব মৃত্যুযন্ত্রণা। ক্ষুধার্ত মুখগুলোর বেঁচে থাকার আকুল চাহনি। কিংবা নালায় ভেসে ওঠা টগবগে কোনো স্বপ্নবাজ যুবকের মৃতদেহ। এসব কিছুকে ছাপিয়ে নিদারুণ মর্মান্তিকতার অবতারণা করেছে, ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মাতৃগর্ভে এক নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু। এ নৃশংস পৃথিবীতে শ্বাস নেওয়ার আগে, নিষ্ঠুর মানবজাতির নির্মমতায় চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।
পোলিশ সীমান্তে এক অভিবাসন প্রত্যাশী ইরাকি নারীর ২৭ সপ্তাহের মৃত ভ্রূণকে মঙ্গলবার মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গ্রীষ্মের সময় থেকে হাজার হাজার অভিবাসী পার হওয়ার চেষ্টা শুরু করার পর থেকে পোলিশ-বেলারুশিয়ান সীমান্তের উভয় পাশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জন মারা গেছে।
মঙ্গলবার পোল্যান্ডের সংখ্যালঘু মুসলিম তাতার সম্প্রদায়ের বোহোনিকি কবরস্থানে জানাজা সম্পন্ন করার পর শিশুটিসহ আরও তিনজন অভিবাসীকে দাফন করা হয়।
তুষার শুভ্র ছোট সাদা কফিনটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই সদস্য এবং ইমাম বহন করছিলেন। শিশুটির কবরের উপর একটি সাধারণ ফলকে নাম লেখা ছিল ‘হালিকারি ঢাকের’।
জানাজা পড়ানোর সময় ইমাম আলি আলেকজান্ডার শোকাহতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এই মানুষগুলো তাদের বাড়িঘর, তাদের দেশ, পর্যটন বা ভ্রমণের জন্য ছেড়ে আসিনি, বরং একটি উন্নত জীবন আশায় তারা পথে নেমেছে’।
তিনি বলেন, ‘যখন আমরা প্রথম কবরটি খনন করি, তখন আশা করেছিলাম যে এটিই বোধহয় শেষ কবর হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তা হয়নি।’
শিশুটির বাবা-মা জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। মা হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় আছেন এবং বাবা তাদের আরো পাঁচ সন্তানের সঙ্গে নিকটবর্তী শহর বিয়ালস্টকের একটি অভিবাসী কেন্দ্রে রয়েছেন।
পোলিশ স্বেচ্ছাসেবকরা ১২ নভেম্বর নারেউকা গ্রামের কাছে, সীমান্তের একটি জঙ্গলে পরিবারটিকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন।
স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যম গাজেতা ওয়েবোরচা এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক পোলিশ স্বেচ্ছাসেবক পিওটার মাটেকি জানিয়েছেন, ‘শিশুরা শান্তভাবে মায়ের পাশে বসে ছিল, তাদের মা যন্ত্রণায় অবিরত চিৎকার করে যাচ্ছিলেন। শিশুদের বাবা সেসময় স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে সাহায্যের আকুতি জানাতে থাকেন।
শিশুদের বাবা বলছিলেন, ‘তার স্ত্রী দুইদিন ধরে এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে, বমি করছে, কিছু খাচ্ছে না।’ একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা নিশ্চিত করেন যে, গর্ভের ভ্রূণটি মারা গেছে।
৩৭ বছর বয়সী এক ইয়েমেনি ও ১৯ বছর বয়সী এক সিরিয়ান যুবক এবং আরো একজন অজ্ঞাত অভিবাসীর পাশে শিশুটিকে দাফন করা হয়।