করোনা মহামারির ঢেউয়ে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে চলছে অস্থিরতা। প্রতিদিনই ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে, যা রীতিমত শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের। সবমিলিয়ে দেশের অভিবাসন প্রবাহের গতি এখন অনেকটাই স্থবির। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এর তথ্য অনুযায়ী, এবছর অভিবাসনের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ৭১ দশমিক ৪৫ শতাশ কমে যাবে।
আজ সকাল ১১টায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২০: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রামরু বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে। এসময় প্রতিষ্ঠানটি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন অভিবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। আর চাকরি হারিয়ে প্রত্যাবর্তনের গতিটা প্রবল হয়েছে গত ৩ মাসে। এ সময়ের মধ্যে দেশে গড়ে প্রতিদিন ফিরে আসছেন প্রায় দুই হাজার কর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বৈশ্বিক লকডাউনের কারণে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোন অভিবাসন হয়নি। শুধু যারা ছুুুটিতে এসে আটকে পড়েছিলেন এমন কিছু সংখ্যক অভিবাসী নির্দিষ্ট দেশে ফিরে গেছেন। করোনা মহামারির পূর্বে অর্থাৎ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত অভিবাসনের যে ধারা অব্যাহত ছিল তা চলতে থাকলে এই বছর অভিবাসন ৩.৫২% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এ বছর অভিবাসীদের গমনের চেয়ে প্রত্যাবর্তনের হার বেশি হওয়ায় অভিবাসন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে।
তাসনিম সিদ্দিকী নারী অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর যারা ফেরত এসেছেন, তাদের মধ্যে ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী রয়েছেন। এ সময়ে দেশে ফেরা নারী কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সৌদি আরব থেকে, ১৭ হাজার ৩১৬ জন। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন আট হাজার ৩৯৭ জন, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কাতার থেকে ফিরেছেন তিন হাজার ৬১৪ জন নারী কর্মী, ওমান থেকে ফিরেছেন দুই হাজার ৫১৬ জন নারী কর্মী। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে প্রথম পাঁচ মাসে নারী কর্মীদের ফিরে আসার হার কম থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নারী কর্মীদের ফিরে আসা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৮২ জন বাংলাদেশি কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। এদের অধিকাংশই এবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিদেশে গিয়েছিলেন। জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২৭ অগাস্ট পর্যন্ত প্রায় ৫ মাসে ২৬টি দেশ থেকে চাকরি হারানোসহ নানা কারণে ৮৫ হাজার ৭৯০ জন অভিবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন। বিগত ৩ মাসে অভিবাসীদের দেশে ফেরার হার তার পূর্ববর্তী পাঁচ মাসের তুলনায় প্রায় চারগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনের কারণে সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে পারেননি এক লাখ নতুন কর্মী।