প্রবাস থেকে জমি ক্রয়-বিক্রয় করবেন যেভাবে

0
3790

মোঃ নওয়াব আলী

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর প্রবাসে থেকে যারা জমি ক্রয় বা বিক্রয় করছেন তারা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শুধুমাত্র সঠিক নিয়ম না জানার কারনে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, চাইলে যে কেউ বিদেশে অবস্থান করে সহজেই সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন।

তাই আপনারা যারা প্রবাসে অবস্থানকালীন জমি ক্রয় অথবা বিক্রয়ের কথা ভাবছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু পরামর্শ:

প্রথমত যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন যারা জমি ক্রয় করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে কিছু পদ্ধতি ও সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে-

১. জমি ক্রয়ের পূর্বে সঠিক বাজার দর জেনে নেওয়া আবশ্যক।

২.নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনি বিভিন্ন মাধ্যমের লোভনীয় মূল্যছাড় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ছেন না তো? কারণ অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এরকম চটকদার বিজ্ঞাপনের বলি হয়ে একবার অর্থ হাতছাড়া হয়ে গেলে তা ফেরত পাওয়া মুশকিল।

৩.জমি ক্রয়ের পূর্বে বিশ্বস্ত কাউকে নির্বাচন করুন। না হলে দেশে এসে দেখবেন, জমি অন্যজনের নামে ক্রয় করা হয়েছে।

৪. এক্ষেত্রে আপনার বিশ্বস্ত ও বৈধ প্রতিনিধি অথবা যিনি দলিল সম্পাদন করেন অর্থাৎ আপনার মনোনীত দলিল লেখক উপস্থিত থাকবেন।

৫.জমি ক্রয় করতে ইচ্ছুক প্রবাসীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: পার্সপোর্টের ফটোকপির সঙ্গে ছবি জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক নয়।

৬. তবে যিনি দলিল দাতা অর্থ্যাৎ যিনি জমি বিক্রয় করবেন তার সকল কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির মালিকানা পর্চা, ওয়ারিশান সনদ, যদি বায়া দলিল থাকে তবে বায়া দলিল, নামজারী, হাল সন খাজনা পরিশোধের রশিদ অবশ্যই থাকতে হবে।

বাকি কাজ দলিল লেখক বা আইনজীবি সম্পাদন করবেন।

বিঃদ্রঃ আপনি যে জমিটা ক্রয় করতে ইচ্ছুক তা যদি সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মধ্যে হয়ে থাকে সে অবস্থায় টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই যেহেতু আপনি প্রবাসী।

এবার যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে জমি বিক্রয় করতে চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য পরামর্শ হলো-

শুধু নিম্মের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে, তবে মনে রাখবেন প্রবাস থেকে জমি বিক্রয় করতে চাইলে আপনাকে যে কাউকে আম-মোক্তার নিযুক্ত করতে হবে যিনি আপনার পক্ষে দলিল সম্পাদন করবেন।

এক্ষেত্রে বিশেষত নিকটতম ব্যক্তিদের আম-মোক্তার নিযুক্ত করা ভাল।সেক্ষেত্রে আইনজীবীর উপরে যদি ভরসা থাকে তবে দলিল সম্পাদন করা সহজ হয়ে থাকে।

১.একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর নিকট গিয়ে জমি বিক্রয়ের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব তথ্যের প্রয়োজন হবে তা হলো, পাওয়ার দাতার নাম ঠিকানার বিস্তারিত বিবরণ, পাওয়ার গ্রহীতার বিস্তারিত বিবরণ, জমির পরিমান ও অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ।

২. পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল তৈরি হলে ডাকযোগে দলিল ও পাওয়ার গ্রহীতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি পাওয়ার দাতার প্রবাসী ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।

৩. ডাক প্রাপ্তির পর পাওয়ার দাতাকে তার নিজের পাসপোর্ট সাইাজের এক কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ প্রেরিত দলিল, গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে অবস্থানরত দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে যেতে হবে।

৪. দুতাবাসে গিয়ে পাওয়ার দাতা একজন কাউন্সেলরের সামনে দলিলে স্বাক্ষর করবেন। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে পাওয়ার দাতা দলিলটি ডাকযোগে দেশে প্রেরণ করবেন।

৫. পাওয়ার গ্রহিতা ডাক হতে দলিলটি গ্রহণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দলিলটি পরীক্ষা করে সত্যায়িত করে দেবেন।

৬. এরপর পাওয়ার গ্রহিতাকে দলিলটি নিয়ে ডিসি অফিসের রাজস্ব কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে দলিলটিতে আঠাযুক্ত প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প লাগানো হবে। এবং একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হবে।

৭. এখন পাওয়ার গ্রহিতা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমিটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের শর্তানুযায়ী হস্তান্তর করতে পারবে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নির শর্ত অনুসারে পাওয়ার গ্রহিতা কর্তৃক সব ধরনের হস্তান্তর এমনভাবে কার্যকর হবে যেন হস্তান্তরটি পাওয়ার দাতা কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছে।

লেখক: এম.এ, এলএল.বি, শিক্ষা নবিশ আইনজীবী (জজ কোর্ট, ঢাকা), দলিল লেখক ও ভুমি পরামর্শক, স্বত্বাধিকারীঃ নারায়ণগঞ্জ ল’ ফার্ম অ্যান্ড ল্যান্ড কনসালটেন্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here