ইউরোপের যেসব দেশে ফ্রিল্যান্স ভিসা দেওয়া হয়

0
1820
ফ্রিল্যান্স-ভিসা

বাংলাদেশ ডিজিটাল আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে সর্বমোট যত সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। নেটজগতের এই বিপুল সংখ্যক নেটিজেনদের জন্য এখন ডিজিটাল নাগরিকত্বের দুয়ার খুলছে ফ্রিল্যান্স ভিসা বা ডিজিটাল নোমাদ ভিসা। কাজের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও কার্যকর করতে বিদেশিদের জন্য বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফ্রিল্যান্স ভিসা ও ডিজিটাল নোমাদ ভিসা দেওয়া শুরু করেছে।

এই ভিসা মূলত যেসব অ-ইউরোপীয় নাগরিক, ইইউভুক্ত বা বিশ্বের যেকোনো দেশের কোম্পানি এবং ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করছে, তাদেরকে ইইউভুক্ত যেকোনো একটি দেশে বসবাস করার অনুমতি দেয়।

বর্তমানে এ ধরনের ভিসা প্রদানকারী কয়েকটি শীর্ষ ইউরোপীয় দেশের তালিকা প্রদান করা হলো। যদিও এসব ভিসা এবং ভ্রমণের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়।

স্পেন

স্পেনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিদের তথাকথিত ‘অটোনোমো’ অনুসরণ করতে হবে। ‘অটোনোমো’ হিসাবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য, একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার এবং স্ব-নিযুক্ত বা কোনো ছোট ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

এছাড়াও, স্পেনের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে, দেশটি সারা বিশ্ব থেকে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করার এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়াসে ডিজিটাল নোমাদ ভিসা বা ফ্রিল্যান্স ভিসা চালু করার পরিকল্পনা করছে।

যদি কোনো ব্যক্তি বসবাসের জন্য স্পেনে আসেন এবং স্পেনে বসেই দূরবর্তী কোনো কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে থাকেন, তাহলে তিনিও একইভাবে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করার যোগ্য হবেন।

ফ্রান্স

ফ্রান্স অন্য আরেকটি ইউরোপীয় দেশ, যেখানে দূরবর্তী কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে।

প্রফেশন লিবারেল ভিসার মাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সারকে ফ্রান্সে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আর তাই ফ্রিল্যান্সারকে স্ব-কর্মসংস্থান ভিসা স্পনসর করার জন্য কোনো নিয়োগকর্তা খোঁজার প্রয়োজন হবে না। যেসব বিদেশি নাগরিক ফ্রান্সে নতুন ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছেন তারা প্রফেশন লিবারেল বিজনেস ভিসা ক্যাটাগরির মধ্যে পড়বেন।

প্রফেশন লিবারেল ভিসার অধীনে একটি দীর্ঘস্থায়ী ভিসা দেওয়া হবে, যেটি রেসিডেন্স পারমিট হিসেবে কাজ করবে। যদি ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ফ্রান্সে আসার পনেরতম দিনে ভিসা বৈধতার জন্য আবেদন করেন, তাহলে এটি এক বছরের জন্য বৈধ হয়ে যাবে।

এই ধরনের ভিসা পাওয়ার জন্য, অবেদনকারীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি প্রতি মাসে কমপক্ষে ১,৫৪০ ইউরো উপার্জন করতে পারেন।

পর্তুগাল

পর্তুগাল ফ্রিল্যান্স ভিসা বা স্ব-কর্মসংস্থান ভিসার জন্যও খুব জনপ্রিয়। এ ভিসার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতি পাওয়া অর্থাৎ ইউরোপে জীবিকা অর্জনের অনুমতি পাওয়া খুব সহজ। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে পর্তুগালের মোট ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ ফ্রিল্যান্সার কর্মী হিসেবে কাজ করছে।

এই ধরনের ভিসায় আগ্রহী আবেদনকারীদের দুটি সম্ভাবনা রয়েছে:

• স্বাধীনভাবে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য রেসিডেন্স ভিসা (পর্তুগিজ ক্লায়েন্টদের জন্য স্থানীয়ভাবে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া)

• উদ্যোক্তাদের জন্য রেসিডেন্স ভিসা।

আরো পড়ুনইতালির ভিসা কত প্রকার এবং কী কী?ই-এন্ট্রি ভিসা চালু করবে কুয়েত‘এটা খুবই ভালো ভিসা, একেবারে লাখের বাড়ি মারবে’যেসব শর্ত পূরণ করলে পাবেন দুই দেশের নাগরিকত্ব

জার্মানি

জার্মানির স্ব-কর্মসংস্থান ভিসা বা ফ্রেইবারুফ্লার ভিসার মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়। তবে এই স্ব-কর্মসংস্থান ভিসা পেতে পূরণ করতে হবে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত।

এছাড়াও, ব্যক্তিদের অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তাদের পর্যাপ্ত উপার্জন রয়েছে। যার অর্থ, আবেদনকারীদের জার্মান ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৫ হাজার ইউরো থাকতে হবে।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিদের বসবাসের অনুমতি তিন বছরেরও বেশি সময়ের জন্য বৃদ্ধি করে থাকে জার্মান কর্তৃপক্ষ। এই ধরনের এক্সটেনশন পাওয়ার জন্য ব্যক্তিদের অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তারা আগে তাদের ফ্রিল্যান্স ব্যবসায় সফল হয়েছেন। এছাড়াও, আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি জীবনযাত্রার খরচ বহন করার জন্য পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করেছেন।

জার্মানিতে ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার পর সেটেলমেন্ট পারমিট পাওয়া যায়।

মাল্টা

মাল্টা ২০২১ সালের জুনে নোমাদ রেসিডেন্স পারমিট চালু করেছে। যার মাধ্যমে ভ্রমণকারীরা মাল্টায় থাকা অবস্থায় কাজ করার অনুমতি পেয়ে থাকে।

মাল্টায় বসবাস করতে আগ্রহী সকল ব্যক্তিদের অনলাইনের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে চাইলে, অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তারা প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই হাজার সাত শত ইউরো উপার্জন করে।

তৃতীয় দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাল্টায় ভ্রমণের জন্য নোমাদ রেসিডেন্স পারমিট ভিসার প্রয়োজন হয়। এই ধরনের একটি পারমিট এক বছরের জন্য চালু করা হয়। মাল্টা সরকারের আবাসন সংস্থা রেসিডেন্সি মাল্টার প্রতিবেদন অনুসারে, বিবেচনার ভিত্তিতে আবেদনের পরে এই ভিসা পুনরায় নবায়ন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

মাল্টায় এক বছরেরও কম সময় থাকতে আগ্রহী সকল ব্যক্তিকে তাদের থাকার সময় একটি জাতীয় ভিসা দেওয়া হয়।

এস্তোনিয়া

এস্তোনিয়ার কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নোমাদ ভিসা চালু করার অনুমতি দেওয়ার জন্য এলিয়েন অ্যাক্টের সংশোধনী অনুমোদন করেছে।

এস্তোনিয়ার ডিজিটাল নোমাদ ভিসা, দেশের বাইরে নিয়োগকর্তা বা ক্লায়েন্টদের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিদের এবং উদ্যোক্তাদের ৩৬৫ দিনের বেশি দেশটিতে বসবাস করার অনুমতি দেয়।

এই ধরনের অনুমোদন পেতে আবেদন করার সময় ব্যক্তিদের অবশ্যই নিম্নলিখিত শর্তসমূহ পূরণ করতে হবে:

•আবেদনকারীকে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূর থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এ বিষয়ক প্রমাণ দেখাতে হবে।

• এস্তোনিয়ার বাইরে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানির সঙ্গে সক্রিয় কাজের চুক্তি থাকতে হবে।

• বর্তমানে মাসিক আয় তিন হাজার পাঁচ শত চার ইউরো হতে হবে।

রোমানিয়া

রোমানিয়াও ঘোষণা করেছে যে এটি দূর থেকে কাজ করতে আগ্রহী সকল বিদেশি নাগরিকদের জন্য ডিজিটাল নোমাদ ভিসা স্কিম চালু করবে।

সেপ্টেম্বরের শেষে, রোমানিয়ার সিনেট এ বিষয়ক একটি খসড়া আইন অনুমোদন করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রোমানিয়ায় ডিজিটাল নোমাদ ভিসা স্কিম চালু হলে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।

কারণ রোমানিয়াতে একজন ব্যক্তির জন্য খরচ প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ ইউরোর কম। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় সেই তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি।

গ্রীস

আরও বেশি সংখ্যক বিদেশি নাগরিককে দেশে আনার জন্য গ্রিসের কর্তৃপক্ষ একটি নতুন আইন পাস করেছে। যার ফলে ডিজিটাল নোমাদ ভিসাধারীদের আয়কর অর্ধেকে নেমে আসবে।

এছাড়াও, এই বছরের শুরু থেকে, স্ব-নিযুক্ত শ্রমিকদের অস্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মহামারিতে পর্যটন খাতের হারানো মুনাফা পুষিয়ে নিতে ডিজিটাল নির্ভর বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রিস। হেলেনিক রিপাবলিকও দেশটিতে কাজ করার জন্য বিপুল সংখ্যক ডিজিটাল কর্মী আনার চেষ্টা করছে।

ফ্রিল্যান্সার এবং অ-ইউরোপীয় ভ্রমণ ভিসাধারীদের অবশ্যই ১২ মাসের বেশি সময়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসার আবেদন করতে হবে। এছাড়াও, গ্রীসে থাকাকালীন আবেদনকারীদের প্রমাণ দেখাতে হবে যে, তাদের আয়ের পরিমান স্থিতিশীলভাবে তিন হাজার পাঁচ শত ইউরোর কম নয় ।

সূত্র:ভিসা ইনফো, উইকিপিডিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here