উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, কালা বাগাই এবং তার পরিবারকে বর্ণবাদের ছোবলে বার্কলে শহর থেকে বিতাড়িত হতে হয়। কিন্তু শতবর্ষ পরে সেই বার্কলেতেই আবারো প্রত্যাবর্তন হচ্ছে কালা বাগাই এর । গত মঙ্গলবার বার্কলে সিটি কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে তার নাম অনুসারে বার্কলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি রাস্তার নামকরণ করে।
বার্কলে সাউথ এশিয়ান রেডিক্যাল হিস্ট্রি ওয়াকিং ট্যুরের একজন কিউরেটর অনির্বাণ চ্যাটার্জির মতে, সেন্টার স্ট্রিট এবং ইউনিভার্সিটি এভিনিউয়ের মধ্যে শাটাক অ্যাভিনিউয়ের দুইটি ব্লকের নাম বাগাইয়ের নামে নামকরণ করা হবে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী নারীদের একজন ছিলেন ।
চ্যাটার্জি বলেছিলেন যে, এই সিদ্ধান্তটি তার হিস্ট্রি ওয়াকিং ট্যুর এবং সাউথ এশিয়ান আমেরিকান ডিজিটাল আর্কাইভ (সাডা) ও পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চ্যাট সহ অনেক সংস্থা দ্বারা আয়োজিত এক বছরব্যাপী প্রচারণার চূড়ান্ত পদক্ষেপ।
বার্কলে সিটি কাউন্সিলের সদস্য রিগেল রবিনসন একটি ইমেইল বার্তায় বলেন, ‘আমাদের শহরে কালা বাগাইয়ের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং এখানে বর্ণিত বর্ণবাদকে স্মরণ করা আমাদের পক্ষে একটি বিরাট পদক্ষেপ । ‘যা ঘটেছিল তা আমরা পূর্বাবস্থায় ফেরাতে পারি না, কিন্তু যারা প্রতিরোধ করেছিল তাদের সংগ্রামকে আমরা সম্মান করতে পারি।’
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতে জন্ম নেওয়া কালা বাগাই ১৯১৫ সালে তার স্বামী বৈষ্ণু দাস বাগাই এবং তাদের তিন ছোট ছেলেকে নিয়ে সান ফ্রান্সিসকোতে এসেছিলেন। কালা বাগাইয়ের নাতনি রানী বাগাই বলেন, তার দাদা তাদের সন্তানদের এমন একটি দেশে লালন পালন করতে চেয়েছিলেন যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, যেখানে তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে সাহায্য করতে পারতেন।
চ্যাটার্জির মতে, কয়েক বছর পরে, কালা বাগাই এবং তার পরিবার বার্কলেতে তাদের নতুন বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু জাতিগত বাধার কারণে তারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে শহর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
চ্যাটার্জি বলেছিলেন, ‘একজন অভিবাসী অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে হয়তো তিনি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মতো জায়গাতে নয়, এখানে বার্কলেতে করে গেছেন । আসলে আমরাই তাকে সেই ধাক্কাটা দিয়েছিলাম, যাতে সে এমন জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম না হয় যা সে চায়।’
১৯২৩ সালে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের কারণে বৈষ্ণু দাস বাগাই এর কাছ থেকে তার নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সাডা এর ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, তিনি ১৯২৮ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন।
চ্যাটার্জি আরো বলেন, বৈষ্ণু দাস বাগাই তার সুইসাইড নোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকে, একটি ‘সোনালি খাঁচায়’ বসবাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
রানী বাগাইয়ের মতে, অবশেষে, কালা বাগাই দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান এবং ১৯৫০ সালে মার্কিন নাগরিক হয়ে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। চ্যাটার্জির মতে, কালা বাগাই বহু বছর ধরে একজন অভিবাসী অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং ক্রমবর্ধমান ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্য তার দুয়ার উন্মুক্ত রেখেছিলেন।
রানী বাগাই বলেন, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য কালা বাগাই অনেক দাতব্য কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে, কালা বাগাই তার স্থানীয় সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশীদের সামনে ভারতীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নৈশভোজের আয়োজন করতেন।
চ্যাটার্জি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে, রাস্তার এই নামকরণ বার্কলের এশিয়ান-বিরোধী আবাসন বৈষম্যের ইতিহাসকে স্বীকৃতি দেবে এবং কালা বাগাইকে সম্মানিত করবে।
রানী বাগাই বলেন, এই ‘কালা বাগাই ওয়ে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের উৎপত্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং অনেক দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানকে তাদের নিজস্ব ইতিহাস যাচাই করতে প্ররোচিত করবে।
রাণী বাগাই আরো বলেন, ‘এটি একটি বিস্ময়কর বিষয় যে তিনি আমাদেরকে বার্কলের মহান ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং আমি তার জন্য খুবই গর্বিত। অবশ্য, আমি এটাও জানি যে, সে যদি আজ এই বিষয়ে জানতে পারত, তবে সে পুরোপুরি বিব্রত হত। সে ভাবতো যে, এর জন্য সে যোগ্য নয়।’
দ্য ডেইলি ক্যালিফোর্নিয়া অবলম্বনে