যুদ্ধ, সংঘাত, দারিদ্র্য আর হানাহানির কষাঘাতে জর্জরিত আফগান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানসহ মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় অংশ। আর এই দীর্ঘ সহিংসতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে, লেবাননে আশ্রিত সিরিয়ানদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক একটি ‘প্রতিশ্রুতিশীল’ প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। ‘ইউরোপীয় স্বাধীনতার স্বপ্ন’ এখন হাজার ডলারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে প্রযুক্তি জগতের এই চাঞ্চল্যকর মাধ্যমটিতে। আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য আইরিশ টাইমস এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
‘২২ হাজার মানুষের সঙ্গে আপনিও যোগ দিন এবং আপনি শীঘ্রই জানতে পারবেন যে, বৈরুত থেকে মিনস্কে যেতে আপনার কী প্রয়োজন: কমপক্ষে নগদ ৩ হাজার ইউএস ডলার এবং ইস্পাতের ন্যায় কঠিন স্নায়ু।’ ‘দ্য ফ্রেন্ডস ট্রাভেল টু বেলারুশ’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের বিজ্ঞাপন এটি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইউরোপে প্রবেশের আইনি পথ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায়, প্রতিবেশী লেবাননে আনুমানিক আট লাখ সিরীয়দের মধ্যে অনেকেই এমন প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
ফেসবুক গ্রুপটিতে, অভিবাসীদেরকে বৈরুত শহরের মূল কেন্দ্র থেকে উত্তরে ২৫ মিনিট দুরত্বে অবস্থিত দ্ববায় এ তিনটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই এজেন্সিগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেলাভিয়া এয়ারের সঙ্গে সপ্তাহে তিনবার বৈরুত থেকে মিনস্ক সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। অন্যান্য ফেসবুক ব্যবহারকারীরা অবশ্য সরাসরি নিকটবর্তী বেলারুশ অনারারি কনস্যুলেটে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
আরো পড়ুন
▪ সীমান্তে ‘সশস্ত্র অভিবাসীদের’ ঠেলে দিচ্ছে বেলারুশ: পোল্যান্ডের অভিযোগ
▪ শরণার্থী ইস্যু : এখনো ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মত্ত লিথুয়ানিয়া-বেলারুশ
▪ পোল্যান্ডে অভিবাসীদের ঠেকাতে জরুরি অবস্থা জারির পরিকল্পনা
প্রতিবেদনটিতে কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর কিছু মন্তব্য উল্লেখ করা হয়। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী, যিনি নিজেকে আলি বলে পরিচয় দেন, তিনি দূতাবাসের মাধ্যমে বেলারুশ গিয়েছিলেন এবং বলেছেন যে বেলারুশ ভ্রমণের জন্য তার আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগেছিল।
জার্মানিতে পৌঁছানো ২৪ বছর-বয়সী এক সিরিয়ান মন্তব্য করেন যে, তিনি কনস্যুলেটকে ভিসা, আমন্ত্রণ পত্র, হোটেল এবং বিমানবন্দরে স্থানান্তরের জন্যে এক হাজার ৫ শত ডলার এবং ফ্লাইটের জন্য আরও এক হাজার ৩ শত ইউরো খরচ করেছেন। তবে তিনি এটা বলেন নি যে, কখন বৈরুত ছেড়েছিলেন বা কীভাবে তিনি পোল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে জার্মানি পৌঁছেছেন।
পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে সংগঠিত হওয়ার পর, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এত বেশি মানুষ ‘বেলারুশ রুট’ গ্রহণ করছিল যে, পোল্যান্ড তার দুটি সীমান্ত অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং চারশো কিলোমিটার সীমান্তের বেশিরভাগ অঞ্চল কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
গন্তব্য জার্মানি
আইরিশ টাইমস এর সূত্র অনুযায়ী, এসব অভিবাসীদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য জার্মানি, যেখানে গত ছয় সপ্তাহে আনুমানিক ছয় হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।
বার্লিন, মিনস্ক এর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মানব পাচারের’ অভিযোগ এনেছে। এছাড়াও মিনস্ক এবং অভিবাসী পরিবহনকারী বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য চাপ দিচ্ছে বার্লিন।
আরো পড়ুন
জার্মান নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, বেলাভিয়ার পাশাপাশি, রাশিয়ান ও তুর্কি এয়ারলাইন্সের উভয়েরই আংশিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারলাইন্সগুলো, বিপুল সংখ্যক অভিবাসী বহন করছে। এক বছর আগে দুটি এয়ারলাইন্সের মধ্যপ্রাচ্যে সপ্তাহে ১৭টি ফ্লাইট ছিল। এখন তারা দামেস্ক, বৈরুত, উত্তর ইরাকের ইরবিল এবং অন্যান্য বিমানবন্দরে প্রায় ৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের চাচাতো ভাইয়ের মালিকানাধীন একটি সহ অন্যান্য চার্টার এয়ারলাইন্স বেলারুশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে, যেগুলো সর্বজনীনভাবে তালিকাভুক্ত নয়।
জার্মান এবং পোলিশ নিরাপত্তা সংস্থা সতর্ক করেছে যে, ‘বেলারুশ সীমান্তে আসা অভিবাসীদের মধ্যে অনেক আফগান ও ইরাকি পুরুষ রয়েছে, যাদের মিনস্কের কাছে সামরিক ক্যাম্পে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
সোমবার এবং মঙ্গলবার সীমান্তে সংঘর্ষের পর, ওয়ারশ-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা শীঘ্রই নিজেদেরকে সংগঠিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।