করোনা মহামারি চলাকালে ভারতে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবাসন অধিকার ক্যাম্পেইনাররা সতর্ক করে বলছে যে, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে হাতে নেয়া নানাবিধ দৃশ্যমান প্রকল্প গ্রহণের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ দ্য হাউজিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্ক (এইচএলআরএন) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২০ মার্চ থেকে চলতি বছরের জুলাই এর মধ্যবর্তী সময়কালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৪৩ হাজারের বেশি বাড়ি ভেঙে ফেলেছে এবং প্রতি ঘণ্টায় ২১ জন করে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন।
ভারত সরকার শুরু থেকেই দেশটিতে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভোগার অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকাতে ভারত সরকার যে লকডাউন জারি করেছে, তা মোটেও বিপুল সংখ্যক গরীব মানুষের কথা মাথায় রেখে দেয়া হয়নি। এমনকি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ক নির্দেশনাও যথাযথভাবে মেনে চলেনি। পর্যাপ্ত নোটিশ জারি না করার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষ কোনো রকম রেশন সুবিধাও পায়নি। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘কঠোর লকডাউন চলাকালে যখন মানুষ দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য লড়াই করছে ঠিক তখন উচ্ছেদ ও বাড়িঘর ভেঙে ফেলার ঘটনা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবিক সংকট তৈরিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে’-সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানিয়েছে ।
ভারতে মানুষের উচ্ছেদ হওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সরকারি তথ্য নেই। ‘যখন কিনা মানুষকে ঘরে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে তখন কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলো। সম্ভবত তারা এই কারফিউ পরিস্থিতিকে সুবিধাজনক সময় হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। যখন মানুষের সরব উপস্থিতি এবং আদালতে এর সমাধানের সুযোগ সীমিত ছিল।’
‘দিল্লিতে গত বছর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ‘অবৈধ দখলদারিত্ব’ ধ্বংস করেছিল। এর ফলে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছিল’-বলে দাবি করেন দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরিচালক অমরিশ কুমার। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি বলেন ‘তারা সরকারি জমিতে ছিল, যা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বোঝানো হয়েছে’ ।
উচ্ছেদের আদেশ আদালতও দিয়েছিল।
আবাসনখাত বিশ্লেষকদের বক্তব্য, করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে বাস্তুচ্যূত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং একইসঙ্গে বস্তিতে কিংবা ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কোনোরকম বিধিনিষেধ না মানার কারণে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকগুণ বেশি। এদিকে মহামারি চলাকালে যেন উচ্ছেদ অভিযান চালানো না হয় সেজন্য গত জুলাইয়ে জাতিসংঘে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ভারত সরকারের প্রতি আর্জি জানিয়েছিল।
ভারতে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছেন। এছাড়া সাত কোটি মানুষ বস্তিতে এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। ২০২২ সাল নগাদ শহর এলাকায় দুই কোটি বাড়ি এবং গ্রামাঞ্চলে ৩ কোটি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ভারতের। কিন্তু এ কাজের গতি খুবই শ্লথ। অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, গৃহহীনতার বিষয়টিকে মোটেও সামনে আনছে না সরকার। এইচএলআরএন এর তথ্য বলছে, এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ উচ্ছেদ ও বাস্তুচ্যূত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ মানুষ রয়েছে, যাদের বনভূমির অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
গত এক বছরে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যা এর আগের বছর ছিল ১ লাখ সাত হাজার। প্রায় অর্ধেকের মতো ছিন্নমূল হয়েছেন পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্পের কারণে, যখন কিনা অবকাঠামো ও শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পগুলোর বাকি কাজগুলোও সম্পন্ন হয়েছিল। ভারতের আদালত, এমনকি শীর্ষ আদালতের আদেশে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। যদিও হাতেগোনা কয়েকটি আদালত মহামারি চলাকালে বাড়িঘর না ভাঙারও নির্র্দেশ দিয়েছিল।
এদিকে দিল্লি হাইকোর্টে উচ্ছেদ অথবা পুনর্বাসন বিষয়ক একশোরও বেশি মামলা ঝুলে আছে।
সূত্র: আল জাজিরা