ভারতে পাচারের শিকার ছয় বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছেন। ত্রিপুরায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় এই ছয়জনকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।
দেশে ফেরার পর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আবেগঘণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফেরত আসা ব্যক্তিরা হলেন, বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার জিয়ারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ সদরের হানিফা আক্তার, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আলপনা খাতুন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের রীনা আক্তার, জামালপুরের মানিক মিয়া এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মোঃ শাহাজান মিয়া। সকাল ১২ টায় আখাউড়ার নো ম্যান্স ল্যান্ডে তাদেরকে ভারত থেকে গ্রহণ করা হয়।
পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরুরী অর্থ সহায়তা এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান ও আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার তাদের হাতে এ সহায়তা তুলে দেন।
দেশে ফেরত আসাদের নথিপত্র থেকে জানা যায়, পাচারের শিকার ছয় বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশে আগরতলার মর্ডান সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদের অনেকেই এই হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাইকমিশন তাদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখেছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হলে দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তবে তারা কীভাবে ভারতে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। উদ্ধারকৃতদের এক আত্মীয় মোহাম্মদ রাজ্জাক জানান, ২০১৪ সালে তাঁর স্ত্রীর বোনের স্বামী জিয়ারুল নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এমন একজন মানুষ কীভাবে ভারতে পাচার হলেন সেটা নিয়ে তারাও বিস্মিত।
পাচারের শিকার আরেক নারী আলপনার চাচাত ভাই দুলাল জানান, ১০ বছর আগে হঠাৎ করে একদিন তাদের বোন নিখোঁজ হন। অনেকদিন পর পুলিশের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন আলপনা আগরতলায় মানসিক হাসপাতালে আছেন। কিন্তু কীভাবে সে ওখানে গেল আমরা বুঝতে পারছি না।
হানিফা আক্তারর ছেলে ইয়াছিন জানান, ৫ বছর আগে হঠাৎ করে তাদের মা হারিয়ে যান। তাঁরা ভেবেছিলেন কোন আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। পরে নানাবাড়ি করিমগঞ্জ থানায় খোঁজ করেন। কিন্তু পাননি। পরে মে মাসে পুলিশ খোঁজ নিতে বাড়িতে এলে জানতে পারেন আগরতলায় আছেন তার মা। দীর্ঘদিন পর এখন মাকে পেয়ে ভীষণ খুশি তারা।