লিবিয়ায় ত্রিপোলির একটি বন্দিশিবিরে গুলি চালিয়ে ছয়জন অভিবাসীকে হত্যা করেছে নিরাপত্তারক্ষীরা। এ ঘটনার পর বন্দিশিবিরটি থেকে অনেকেই পালিয়ে গেছেন এবং বাকিরা পার্শ্ববর্তী সড়কে জড়ো হয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আইওএম এর লিবিয়া মিশনের প্রধান ফেদেরিকো সোডা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘গুলি করে মোট ছয়জন অভিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। বন্দিশিবিরের নিরাপত্তারক্ষীরাই তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।’ এসময় তিনি আরো জানান, ‘গোট শাল নামক বন্দিশিবিরটিতে বহুসংখ্যক আটককৃতদের একসঙ্গে রাখায় সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে মানুষজনকে উন্মুক্ত জায়গায় ঘুমাতে হয় এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে এখানে।’
শুক্রবার হতাহতের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ক অসংখ্য ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স ও আলজাজিরা এসব ভিডিও তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি। ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, কয়েক ডজন মানুষ বেড়ার ফাঁক দিয়ে বের হচ্ছে এবং ত্রিপোলির রাস্তায় অসংখ্য মানুষ মিছিল করছে।
স্থানীয় দুজন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসীকে এই এলাকার রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ে যেতে দেখেছেন। রয়টার্সের সংবাদকর্মী বলেছেন, নিরাপত্তারক্ষীদের প্রহরায় কয়েক ডজন অভিবাসী মেঝেতে বসেছিলেন। এলাকাজুড়ে খুব ভারি নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখানে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
আইওএম এর লিবিয়া মিশনের প্রধান সোডা বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা গত শুক্রবার ত্রিপোলির বন্দিশিবিরে কমপক্ষে ৯০০ জন অভিবাসীকে আটক করে রেখেছিল। এদের মধ্য থেকে অনেকে পালিয়ে গেছেন। এদিকে যারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি শিশুদের মতো নিরাপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়ার জন্য লিবিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি একইসঙ্গে বলছে, যেসব অভিবাসীদের আটক করা হয়েছে, তারা সবাই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার দ্বারা নিবন্ধিত। ফলে তারা শরণার্থী অথবা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে স্বীকৃত।
এদিকে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা অভিযোগ করে জানিয়েছে, দেশটিতে অভিবাসীদের ওপর চালানো চরম নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা সীমা ছাড়িয়েছে। তারা অভিবাসীদের ওপর দমন-পীড়নের এ অবস্থাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
লিবিয়ার নিরাপত্তা বাহিনি অভিযান চালিয়ে গত সপ্তাহে ৫ হাজারের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীকে গ্রেফতার করেছে। লিবিয়ায় লাখ লাখ অভিবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে ইউরোপে পাড়ি জমাতে চাইছেন এবং অন্যরা দেশটিতে অবস্থিত বৃহৎ তেল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের উদ্দেশ্যে এসেছেন।
অভিবাসন প্রত্যাশীরা নিয়মিতভাবে লিবিয়ায় সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যেখানে এক দশক ধরে যুদ্ধ ও হানাহানি লেগে আছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, এখানকার বন্দিশিবিরগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয় ও অস্বাস্থ্যকর। বন্দিশিবিরে ২১৫টি শিশু ও ৫৪০ জনেরও বেশি নারী রয়েছেন, এদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ জন গর্ভবতী ছিলেন বলে দাবি আইওএমের। অন্যদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত শুক্রবারই জানিয়েছিল যে, এসব আটককেন্দ্রে অভিবাসীরা নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছেন। অবশ্য এসব ঘটনা সম্পর্কে লিবিয়া সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে লিবিয়ার তৎকালীন শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন অভিযান শুরু হলে দেশটিতে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়। গাদ্দাফির পতনের পর দেশটির শাসনভার চলে যায় বিভিন্ন স্থানীয় স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে।