বাংলাদেশ থেকে যে রোহিঙ্গারা সৌদি আরব গেছেন তারা পাসপোর্ট পাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ৷ ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন সিদ্ধান্ত জানান ।
সৌদি আরবে অবস্থানরত ৫৫ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় সৌদি আরব ৷ তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সৌদি আরব রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে চায় এটা ঠিক না, এই তথ্যটি ভুল, তারা সেখানেই থাকবেন৷ সৌদি আরব এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নয়, বাংলাদেশী পাসপোর্ট দিতে বলছে ।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যে রোহিঙ্গারা সৌদি আরব গেছেন তারা পাসপোর্ট পাবেন ৷’
সাধারণত পাসপোর্ট হল একটি ভ্রমণের দলিল, যা মূলত আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ব্যক্তির পরিচয় এবং জাতীয়তার প্রমাণস্বরূপ কোনো দেশের সরকার তার নাগরিকদের জন্য জারি করে থাকে। তবে, রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিরা সাধারণত নাগরিকত্ব ছাড়া কোনো দেশ থেকে জাতীয় পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য অনুমোদন পায় না, কিন্তু তারা শরণার্থী ভ্রমণের দলিল বা “নানসেন পাসপোর্ট” পেতে সক্ষম হতে পারেন। যার মাধ্যমে তারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে কোন ধরনের পাসপোর্ট পাবে এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করেননি।
তিনি জানান, সৌদি আরব বিভিন্ন সময়ে বহু রোহিঙ্গা নিয়েছে ৷ কিছু তারা নিয়েছে এবং কিছু বিভিন্ন উল্টাপাল্টা করে চলে গেছে ৷ ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন সৌদি বাদশাহ বললেন যে তার দেশে রোহিঙ্গারা থাকবেন ৷ ৭০ দশকের শেষে, ৮০ এর দশকের শুরুতে অনেক রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গেছেন ৷ ওখানে গিয়ে তারা থাকছেন৷ তাদের ছেলে-মেয়ে হয়েছে৷ ৩০-৪০ বছর ধরে তারা ওখানে আছেন ৷ ছেলে-মেয়ে জীবনে বাংলাদেশ দেখে নাই ৷ তারা বড় হয়েছেন৷ বৃদ্ধ হয়েছেন ৷ এখন সৌদি আরব বলছে, তাদের দেশে নাগরিকত্ব বিহীন কাউকে রাখবে না ৷ তারা সহজে কাউকে নাগরিকত্ব দেয় না বলে তারা একটা প্রস্তাব করেছে যে, এই লোকগুলোকে তারা পাঠাবে না ৷ তাদের যদি নাগরিকত্ব দেয়া হয় তারা ওই দেশেই(সৌদি আরব) থাকবে ৷ শুধু যারা জেলে থাকা ৪৫২ জনকে পাঠাবে ৷
মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা বলেছি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে কেউ গিয়ে থাকলে তাদের পাসপোর্ট অবশ্যই আমরা রিনিউ করব ৷ আর তাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট না থাকলে আমরা পরীক্ষা করব ৷ একদম ওয়ান টু ওয়ান যাচাই বাছাই করে দেখব যে, তারা বাংলাদেশে কোনোকালে কোনোভাবে ছিলো কিনা, তাদের লিগ্যাল স্ট্যাটাস কী? সেটা যদি থাকে তাও আমরা তাদের কনসিডার করব ৷ যদি সে আমাদের দেশ থেকে না গিয়ে থাকে তাহলে আমরা তাদের গ্রহণ করব না৷”
পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছে ৷ কমিটি সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে ৷ বাংলাদেশ তার এই অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে ৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও কথা হয়েছে ৷ তারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন ৷
কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছেন তার কোনো সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ তবে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভুয়া পাসাপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন বলে জানান তিনি ৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি যে ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৬ সালে বহু রোহিঙ্গা ভুয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন ৷ চট্টগ্রাম থেকেও বহু রোহিঙ্গা গেছেন৷ বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা ঘুস খেয়ে তাদের পাসপোর্ট দিয়েছেন ৷ দূতাবাসের অফিসারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে যে তারা পাসপোর্ট দিয়েছেন৷”
তবে তিনি জানান, এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় খুব কড়া ৷ কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছেনা ৷ এটা নিয়ে তদন্তের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত না, এবার আমরা অভিযোগ পেলে সাথে সাথে তাকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি ৷ একজনের বিরুদ্ধে শুনেছি, তাকে বাদ দিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু কোথায় যে কে লুকিয়ে থাকে জানা কঠিন ৷ এটা যে সব সময় বড় অফিসারেরা করেন তা নয়, অনেক সময় ছোট স্টাফরাও করেন ৷ এখানে অনেক দুষ্ট লোক আছে ৷ তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি৷”