২০২০ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার উৎসবে মেতেছে আজ সারা পৃথিবীর মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা মিলছে, নতুন বছর নিয়ে অসংখ্য প্রত্যাশা আর ইচ্ছা পূরণের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। এর মাঝে আরেকটি ভিন্ন বিষয় যোগ হয়েছে এবং তা নিয়ে বেশ মজাই করছেন অনেকে। বিষয়টি হলো, ১ জানুয়ারি একযোগে অসংখ্য মানুষের জন্মদিন পড়ে যাওয়া। হাস্যরসের সঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে কারো মন্তব্য, বছরের প্রথম এই দিনেই এত মানুষের জন্মদিন হওয়াটা অবিশ্বাস্যই বটে।
যাহোক, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ছিন্নমূল মানুষ, যারা নিজ দেশ বা বসতবাড়ি ছেড়ে জীবন-জীবিকার সন্ধানে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একইরকম ঘটনা ঘটে থাকে হরহামেশাই। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার জানাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মধ্যে ১১ হাজারেরও বেশি জনের জন্মদিন আলোচিত এই দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি। উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরো দেখা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অন্যান্য সব দেশের নাগরিকদের চেয়ে সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার নাগরিকদের বেশিরভাগেরই জন্মদিন ১ জানুয়ারি।
এখন প্রশ্ন, তাহলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগের জন্মদিন কেনো ১ জানুয়ারি?, ১ জানুয়ারিতেই কেনো এত সংখ্যক মানুষের জন্মদিন পড়লো? আসলে এককথার এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় দুইভাবে-সরল ও জটিল করে। এক্ষেত্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেলায় কেনো এমন ঘটছে, সেদিকে নজর দিলেই মোটাদাগের উত্তর মিলবে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে বিজনেস ইনসাইডার এর বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, যেসব শরণার্থী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে, তাদের জন্ম তারিখ আমাদের মতো সাধারণদের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম এবং একইরকম। জীবন বাঁচানোর তাগিদে যেহেতু তারা সবকিছু ফেলে পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে ভিন দেশে এসেছে, সেহেতু আসার সময় মনে করে জন্মসনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসা তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। এর ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই তাদের শুন্য হাতে অন্য সীমান্তে প্রবেশ করতে হয়। তাছাড়া পরবর্তীতে সরকারের কাছ থেকে তাদের জন্মতারিখ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রে সবার জন্ম তারিখ উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই নতুন করে তাদের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি লেখার পরামর্শ দেয়া হয়। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মারিলু কাবরেরা, ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস বিভাগের এ প্রতিনিধি বলেন, ‘(এইসব ঘটনার ক্ষেত্রে) জানুয়ারির ১ তারিখকেই আমরা সাধারণত জন্ম তারিখ হিসেবে লিখে দিই।’
হতাশার মধ্যে মজার ব্যাপার হলো, নতুন আগতদের বেশিরভাগের জন্মদিন ১ জানুয়ারি হওয়ায়, বছরের শেষদিন অর্থাৎ থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের মাধ্যমে সবাই যখন নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার খুশিতে মত্ত থাকে, তখন ঠিক একই সময় অভিবাসী শিশুরাও তাদের পিতামাতাকে একযোগে শুভ জন্মদিন জানিয়ে আনন্দ প্রকাশের সুযোগ পায়। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা দেখা যায়। একজন স্থানীয় বলছেন এভাবে, ‘‘প্রত্যেক অভিবাসী, শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও নবাগত,যারা কিনা ১ জানুয়ারি নিজেদের বিশেষ এই দিনটিকে পালন করেন, সম্মানের সঙ্গে আমরাও তা উদযাপন করতে চাই। আপনাদের (অভিবাসনপ্রত্যাশী) অনন্য সংস্কৃতি, বিশেষ ঐতিহ্য ও হাজার বছর ধরে বয়ে চলা লড়াই ও আশা জাগানিয়ায় পূর্ণ গল্পকথার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আমাদের ভাগ্যবান করেছেন, এজন্য আপনাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’’