‘বাইডেনকে বলুন আমরা আসছি’
হাজার হাজার অভিবাসীর একটি দল গত কয়েকদিন ধরে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য যাত্রা করেছে । এই অভিবাসীরা মার্কিন সীমান্তের দিকে তাদের দীর্ঘ যাত্রার তৃতীয় দিনে সোমবার সকালে মেক্সিকোর দক্ষিণে হুহুয়েতান শহর ছেড়েছে।
এসব অভিবাসীদের বেশিরভাগই মধ্য আমেরিকান, দক্ষিণ আমেরিকান ও হাইতিয়ান। এই বছরের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে সংগঠিত অভিবাসীদের দল এটি।অংশগ্রহণকারীরা দলবদ্ধ এই যাত্রায় যোগদানের জন্য ১৫ অক্টোবর থেকে ‘কিউআর’ কোডের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছে৷
এই যাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে এল সালভাদর থেকে আসা উইলিয়াম নামে এক অভিবাসী ফক্স নিউজকে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন,‘বাইডেনকে বলুন আমরা আসছি।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হাজার হাজার অভিবাসী, যাদের মধ্যে ছোট বাচ্চারা আছে, তারা মেক্সিকোর তাপাচুলা নগরীর ২০ মাইল উত্তর দিক থেকে হেঁটে আসছে। সামনের সারিতে থাকা একজন অভিবাসী কাঠের একটি বড় ক্রুশ বহন করছে এবং অন্যদের হাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নাম লেখা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা রয়েছে।
তাদের মধ্যে একজন অভিবাসী বলছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আমাদের আপনার সাহায্য দরকার,’
২০১৯ সালে অভিবাসীদের এমন যাত্রা দেখা গিয়েছিল, তবে এবারের ঘটনাটির ব্যাপকতা অনেক বেশি। এসব অভিবাসীদের যেন ট্রাকে বহন করা না হয় সে বিষয়ে মেক্সিকান সরকার ট্রাক চালকদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাই তাদের টেক্সাস সীমান্তের পুরো ২৫০০ মাইল হাঁটতে হবে।
মেক্সিকান কর্মকর্তারা ফক্স নিউজকে বলেছেন যে, দলবদ্ধ এ যাত্রায় ৩ হাজারেরও বেশি অভিবাসী রয়েছে, যারা শনিবার গুয়াতেমালার সীমান্তে তাপাচুলা নগরী পার হয়ে এসছে।
যাত্রার কয়েক ঘন্টার মধ্যে, অভিবাসীদের এই স্রোত মেক্সিকান অভ্যন্তরীণ পুলিশের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হয়।পুলিশ সেখানে প্রতিরক্ষামূলক গিয়ার এবং ঢাল নিয়ে অবস্থান করছিল। কিন্তু এই জনস্রোতকে আটকে রাখা যায়নি, অভিবাসীরা অবরোধ ভেদ করে সামনে এগোতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রচেষ্টায় তাদের এ যাত্রা অব্যাহত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশন শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, ২০২১ অর্থবছরে ১৭ লাখেরও বেশি অভিবাসীকে মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। এছাড়াও বাইডেন প্রশাসনকে সেপ্টেম্বরে হাইতিয়ান অভিবাসীর একটি বিশাল ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, তাদেরকে এমন আরো অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢল মোকাবেলা করতে হতে পারে।
বাইডেন প্রশাসন মধ্য আমেরিকায় চলমান দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও সহিংসতার মতো বিষয়গুলোকে উদ্ভূত পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে দায়ী করছে। সেই সঙ্গে এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য করদাতাদের দেওয়া অর্থের একটি বড় অংশ এখানে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যে বাইডেন প্রশাসনকে ট্রাম্প-শাসনামলের সীমান্ত নীতিতে ফেরত আসার দিকে ইঙ্গিত করছে । বিশেষত, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি গ্রহনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই নীতি অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গৃহীত আবেদনের শুনানি হওয়ার আগ পর্যন্ত আশ্রয়প্রার্থীদের মেক্সিকোতেই বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হত।
বাইডেন প্রশাসন এই মেক্সিকো সীমান্ত নীতি নাকচ করতে চাইলে, টেক্সাসের একটি ফেডারেল আদালত রায় দেয় যে, এটি পূর্ববর্তী স্মারকলিপি আইনের বিরুদ্ধে চলে যাবে। বাইডেন প্রশাসন তাই ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতিটি বাদ দেওয়ার ভিন্ন উপায় খুঁজছে।
বর্ডার পেট্রোল সূত্রে ফক্স নিউজ জানিয়েছে যে, ৬০ হাজার অভিবাসী মার্কিন সীমান্তের মেক্সিকান দিকে জড়ো হচ্ছে এবং সীমান্ত নীতির পুনঃবাস্তবায়নের প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।