নতুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, ২০২০ সালে ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু তাদের জন্মভূমির বাইরে বসবাস করেছে এবং অতিরিক্ত ২ কোটি ৩৩ লাখ শিশু অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুুচ্যূত হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, একই বছরের পুরোটা জুড়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় কোটি শিশু নতুন করে বাস্তুচ্যূতর মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশুদের সংখ্যা বেশি বলেও উল্লেখ করা হয়।
এদিকে কোনো শিশুর বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে লিঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং যাত্রাজুড়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও দুর্বলতাগুলি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বলেও প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়। আজ ‘সীমান্তজুড়ে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মেয়ে ও ছেলে শিশু অভিবাসিত হচ্ছে অথবা তাদের নিজেদের দেশ ছেড়ে বাস্তুচ্যূত হতে বাধ্য হচ্ছে’-জেনেভায় প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় বলেন ভেরেনা নাউস, ইউনিসেফ এর গ্লোবাল লিড ফর মাইগ্রেশন ও ডিসপ্লেসমেন্ট। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের চেয়ে সংখ্যাটি প্রায় ১০ মিলিয়ন বেড়েছে।
মিসেস নাউস বলেন, একটি শিশু অভিবাসী নাকি শরণার্থী তা নিয়ে অনেক নীতিগত বিতর্ক আছে। ‘কিন্তু লিঙ্গের ভিত্তিতে অভিবাসন ও পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে ভিন্নভাবে হাজির হয় সেসম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি।’ ‘লিঙ্গ বিষয়টি পরোক্ষভাবে অভিবাসনের গন্তব্যস্থল ও অভিবাসনে ভূমিকা রাখে।’ ২০২০ সালের একটি হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে আসা প্রতি দশজন শিশুর নয়জনই ছেলে। এদের অর্ধেকের বেশি আফগানিস্তান, মরোক্কো ও সিরিয়া থেকে।’
প্রধান ১০টি দেশের এ তালিকার এক নম্বরে অবস্থান করছে আফগানিস্তান। ইউরোপে আশ্রয় প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঙ্গীহীন শিশু রয়েছে আফগানিস্তানে। ‘যদিও আমরা জানি মেয়েশিশুদের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আফগান ছেলেশিশু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অভিবাসিত হয়েছে।’
তাহলে ‘আফগান মেয়েরা কোথায়? আজ ও আগামী দিনগুলোতে কোথায় ও কীভাবে আফগান মেয়েরা আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পেতে পারে? প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
প্রতিবেদনে অভিবাসনের সিদ্ধান্ত কীভাবে লিঙ্গভিত্তিক হয় তাও তুলে ধরা হয়। মিসেস নাউস বলেন, ছেলে ও মেয়েরা নানা কারণে চলে যাওয়ার জন্য প্রভাবিত হয়। ‘ছেলেদের প্রায়ই রুটি বিজয়ীর ভূমিকা গ্রহণ করা হয় বলে প্রত্যাশা করা হয়। যখন কিনা মেয়ে শিশুরা বাল্যবিবাহ বা দ্ব›দ্ব সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা থেকে বিরত থাকার কৌশল হিসেবে স্থানান্তরিত হতে পারে। মোটাদাগে বললে যৌন নিপীড়নের জন্য মেয়েরা পাচারের শিকার হয় অন্যদিকে ছেলেদের পাচার করা হয় জোরপূর্বক শ্রমের জন্য।
প্রতিবেদনটিতে এও তুলে ধরা হয়েছে যে, কীভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান লিঙ্গ অসমতাগুলি মানবিক পরিবেশে আরো বেড়ে ওঠে। যেখানে ছেলেদের তুলনায় বাস্তুচ্যূত মেয়েদের স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা আড়াই গুণ বেশি-জানান মিসেস নাউস।