অভিবাসী ডেস্ক: কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উত্তরণ এবং বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসীকল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি।
আজ রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে আয়োজিত অভিবাসন খাতের জাতীয় পর্যায়ের অংশীজনদের এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ন্যাশনাল লেভেল স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন অন সেইফ মাইগ্রেশন এবং সাসটেনেবল রিইন্টিগ্রেশন ইন দ্য কনটেক্সট অব কোভিড-১৯ ক্রাইসিস শীর্ষক এ পরামর্শ সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের কারণে আবাসন খাতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলা করতেসরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে, সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা এ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে পারবো।’
করোনা মোকাবেলায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সরকার তাদের জন্য যে নানামুখী সুযোগ সুবিধা দিয়েছে তা যেন তিনি অভিবাসী এবং তাদের পরিবার ভোগ করতে পারেন।’
‘সরকার প্রবাসী কর্মীদের জন্য ৭০০ কোটি টাকা ঋণ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ টাকা বেশিরভাগই ব্যাংকে পড়ে আছে। আমরা শর্ত শিথিল করার পরও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না’-যোগ করেন মন্ত্রী।
প্রবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের জন্য সরকারের যে সেবা সে সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। বিদেশ যাওয়ার আগেই কোথায় যাচ্ছেন, কত টাকা খরচ করবেন, কী কাজ করবেন তা ভালোভাবে জেনে যেতে হবে। তাহলে বিদেশে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
প্রবাসী কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরির ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসী কর্মীদের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং তাদের জন্য সেবা নিশ্চিত করতে সবার আগে প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ। এই ডাটাবেজে শুধু কতোজন বিদেশ গেল এবং কতো জন ফিরলো সে সংখ্যা থাকলেই হবে না। এখানে সব ধরনের তথ্য থাকতে হবে।’
বিদেশফেরত প্রবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণ (রিইন্টিগ্রেশন) এর ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে এসে কী কাজ করবে, কীভাবে করবে সে বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত কোভিড শুরু হওয়ার পর আমাদের সামনে মূলত পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিলো। প্রথম যারা বিদেশে আছেন তারা কীভাবে সেখানে ভালোভাবে থাকতে পারেন, চাকরির নিশ্চায়তা পেতে পারেন। দ্বিতীয়ত যারা ফিরে আসতে চাচ্ছেন তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। তৃতীয়ত যারা ফেরত এসেছেন তাদেরকে কীভাবে আবার পাঠানো যায় এবং চতুর্থত যারা দেশেই থাকবেন তাদেরকে কীভাবে সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। সর্বশেষ, নতুন করে কীভাবে আবার বৈদেশিক কর্মসংস্থান শুরু করা যায়। কিন্তু সরকারের নানামূখী উদ্যোগের ফলে আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করছি। আমরা সচেতনতাও তৈরি করার চেষ্টা করছি। তবে তৃণমূলে যারা কাজ করেন তারাই মূলত মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সচেতনতার কাজটি খুব ভালোভাবে করতে পারেন।’
স্বাগত বক্তব্যে বিএমইটির মহাপরিচালক মোঃ শামসুল আলম বলেন, ‘সরকারের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক রেমিট্যান্স অর্জিত হলেও বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য পুরণ হবে না। এ বছর মাত্র দুই লাখ লোক বিদেশে গিয়েছে। সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপে আমরা গোটা পরিস্থিতি সামলে নিয়েছি। আমি আশাবাদী অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে আমাদের প্রবাসী খাত ‘
অনুষ্ঠানোা বায়রার সভাপতি সাংসদ বেনজির আহমেদ বলেন, ‘দক্ষ লোক তৈরি করতে আমরা একটা ট্রেনিয় সেন্টার করছি। আমরা চাই আমাদের এমন দক্ষ কর্মী তৈরি হবে যেন আমরা কারো কাছে ধরনা দেয়ার পরিবর্তে তারাই আমাদের লোক খুঁজে নেয়।’
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘আমাদের একটি কার্যকর ডেটাবেজ গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ লোকজন যেন নতুন নতুন শ্রম বাজারে প্রবেশ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি যারা বিদেশে থেকে ফেরত এসেছেন তাদের রিইন্ট্রিগ্রেশনের বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্র্যাকের পক্ষ এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করা হচ্ছে।’ অভিবাসন খাতে ব্যাপক ডিজিটাইজেশনের ওপর জোর দিয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, স্মার্টকার্ড, ই-পাসপোর্টসহ অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশনের সুফল আমরা পাচ্ছি। কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয় আমাদের পুরো অভিবাসন খাতকে এমনভাবে ডিজিটাইজেশন করতে হবে যেন বিদেশ যাওয়া বা ফেরত আসা প্রতিজন অভিবাসীর তথ্য সরকারের হাতে থাকে, চাইলেই সেখানে প্রবেশ করে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। আর সর্বোপরি দক্ষতা ভিত্তিক এবং নিরাপদ অভিবাসনের ওপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বাংলাদেশের অভিবাসন খাতে সুইজ সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অভিবাসনের সাম্প্রতিক চিত্র এবং প্রবণতা নিয়ে বিশেষ উপস্থাপনা প্রদান করেন বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মীর খাইরুল আলম। সবাই নিরাপদ অভিবাস ও কার্যকর পুনরেকত্রীকরণের বিষয়ে কীভাবে সম্মিলিথভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, বোয়েসল এর কর্মকর্তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।