জীবন নিয়ে এক বিরাট বাজিই ধরেছিলাম

0
534

আমি মো. হারুন অর রশিদ; জন্ম ১৯৬২ সালের ১০ অক্টোবর। পড়াশোনা খুব বেশি দূর এগোতে পারিনি; এসএসসিতেই যবানিকা টানতে হয়েছে। আমার জন্মস্থান বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ভোজপুর গ্রামে।

কর্মের উদ্দেশ্যে আমি খুলনায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলাম। এখানে ওয়েল্ডিং-এর কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করতাম, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। এমনকি নিয়মিতভাবেও এ কাজ পেতাম না। তার ওপর আবার বেশ কিছু পরিমাণ অর্থ ঋণ ছিল আমার। এসব কিছুর সমাধানে একদিন আমি বিদেশ যাওয়ার জন্য মনস্থির করি।

একপর্যায়ে অধিক রোজগারের আশায় বিদেশ যাওয়ার জন্য আবারো ঋণ নিই। সবমিলিয়ে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার বন্দোবস্ত করি। এ অর্থের পুরোটাই আমি তুলে দিয়েছিলাম দালালের হাতে। বলা যায় জীবন নিয়ে এক বিরাট বাজিই ধরেছিলাম।

সত্যি বলতে কী আমার বরাবরই আগ্রহের দেশ ছিল গ্রিস। অনিন্দ্য সুন্দর এই দেশে যেতে পারলে জীবনের চাকাও বদলে যাবে ভেবে ধরে নিয়েছিলাম। এজন্য ২০০১ সালের ২০ জুলাই বাংলাদেশের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে মিশরের কায়রো যাই। সেখান থেকে আমার স্বপ্নের দেশ গ্রিসে পৌঁছাই। এখানে আমি কসমেটিকস, প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ বছর চাকরি করি।

এরপর ঘটনার নানা সূত্রতা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দেশে ফিরে আসি।দেশে ফেরত আসার পর আমার রোজগার থেমে যায় এবং জমানো অর্থ খরচ হতে থাকায় হতাশা ও দুঃশ্চিন্তায় ভোগা শুরু করি। সংসার খরচের বাইরে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য অর্থ জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছিলাম আমি। এরপর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম, খুলনা থেকে কাউন্সেলিং সেবা পাই আমি। কাউন্সেলিং সেবা পেয়ে আমি মানসিকভাবে ভালোবোধ করতে থাকি। এরপর সেখানাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার আমার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা শোনেন, মূলত নিজের তৈরি করা দোকানে আমি মুদি ও মনোহরির ব্যবসায়ের চিন্তা করছিলাম আমি।ফ্রান্সে ছয় বছর মোটামুটি ভালোভাবেই পার করেছিলাম। কিন্তু শরীরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতা তৈরি হলে আমাকে বাধ্য হয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

এরপর যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা মেনে আমার চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর নগদ ৭০ হাজার টাকা সমপরিমাণ মুদিপণ্য ক্রয় করে দেয়া হয়। বর্তমানে আমি এসব পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে ভালো রোজগার করছি।

আসলে আমি এখন মানসিক ও আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি। সে লক্ষ্য পূরণের জন্য এই ৫৮ বছর বয়সে এসেও যা করণীয় আমি তাই করবো এবং নতুন উদ্যামে কর্মময় জীবন শুরু করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here