স্থানীয় ঝুঁকি: এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মানুষের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের ভেতরে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে খুলনা শহরে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম
ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন অভিবাসনের হারকে বাড়িয়ে তুলছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়, বন্যা, ভূমিধ্বস ও জলোচ্ছ্বাসে প্রতি বছরই দীর্ঘায়িত হচ্ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের তালিকা। ২০১৭ সালে জুলাই এ এডিবির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, জলবায়ু পরির্তনের কারণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি হবে। ধাপে ধাপে বাস্তুচ্যুত হবে বাংলাদেশের অনেক মানুষ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের ভেতরে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে খুলনা শহরে। এর পরেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে চাপ বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, খরা, পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও নদী ভাঙ্গনের মতো দুর্যোগের মাত্রা বাড়বে। দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলকে খরাপ্রবণ, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে লবণাক্ততাপ্রবণ ও দক্ষিণ অঞ্চলকে নদীভাঙ্গন-প্রবণ এলাকা হিসেবে ঐ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের তিন বছর পর, এবছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে জলবায়ু বিপর্যয়ের দীর্ঘায়িত প্রভাবের মুখোমুখি হতে চলেছে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের চলতি মাসের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মধ্যে ৪৬% সাতক্ষীরা এবং ৬১% খুলনা জেলার। জলাবদ্ধ অঞ্চলগুলিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে যাওয়ার কারণে ২০২১ সাল পর্যন্ত এসব এলাকা কৃষিকাজের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। আক্রান্ত এলাকাগুলো প্রধানত কৃষিনির্ভর হওয়ায় কৃষক এবং দিনমজুর শ্রেণী আরো প্রতিকূল অবস্থায় পড়বে।
গবেষণায় আরো বলা হয়, এইসব অঞ্চলের প্রায় ৪০% মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছে। বেসরকারি হিসাব মতে, এইসব জেলা থেকে প্রায় ৮ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব আক্রান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত মানুষেরা তাদের নিকটস্থ শহরগুলোতে আবাস গড়বে। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত কর্মহীন মানুষ কর্মসংস্থান ও আশ্রয়ের খোঁজে ভীড় জমাবে বিভাগীয় শহর খুলনাতে।
খুলনা শহরের অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের উপর সংস্থাটির পরিচালিত জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, ২৩ শতাংশ অভিবাসী দারিদ্রতার কারণে ও ১২% অভিবাসী দুর্যোগের পুনরাবৃত্তির আশংকায় অভিবাসিত হয়েছেন।