আমি বিনয় মন্ডল। আমার বয়স ৩৩ বছর। জার্মানি থেকে দেশে ফিরে এসে নতুনভাবে নিজেকে গড়ার লড়াই করছি। আমার পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে চার বোন। তাদের তিনজন আমার বড় এবং তাদের প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ছোটবোনটি শারীরিক প্রতিবন্ধি। পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় ওই অল্প বয়স থেকে সব দায়িত্বই আমার কাঁধে এসে পড়ে। আমি খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলাম। কিন্তু তা স্বত্বেও পরিবারের অনটনের কাছে আমার স্বপ্নকে সঁপে দিতে হয়েছে।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই আমার চেয়ে ছোটোদের পড়ানোর কাজ শুরু করেছিলাম। এছাড়া নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি আমার চাচার দোকানেও দেখাশুনা শুরু করি। এভাবে পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য পরবর্তীতে পড়াশুনার পাশাপাশি আরো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করি।তবে আশানুরূপ রোজগার করতে না পারায় বিদেশ যাবার স্বপ্ন দেখা শুরু করি।
একপর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে তুরস্ক হয়ে গ্রিস-মেসেডোনিয়া-সার্বিয়া হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়া হয়ে জার্মানিতে আসি আমি। জার্মানিতে এসে আমি প্যাকেজিং শ্রমিক হিসেবে কোম্পানিতে চাকরি নিই। পাঁচ বছর এখানে চাকরি করি। জার্মানিতে আশ্রয় প্রার্থী হওয়ার আবেদন বারবার করার পরও দেশটির সরকার তা গ্রহণ করেনি। তবে এর মধ্যে একদিন দুঃসংবাদ আসে আমার বাবা গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারে ভুগছেন। তার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। এরপর আমি পরিশ্রম বাড়িয়ে দিই বাড়তি টাকা রোজগারের জন্য।
অন্যদিকে জার্মানিতে বৈধভাবে থাকার কাগজপত্রও আমি জোগাড় করতে পারিনি। এদিকে বাবার অবস্থাও খারাপ হচ্ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হই। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। এরপর সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশ রিটার্নি’ বা প্রত্যাশা প্রকল্পের অধীনে আমাকে ২ হাজার ইউরো দিয়ে মুদি সামগ্রী কিনে দেয়া হয়। এখন আমি তা দিয়ে একটি দোকান দিয়েছি এবং ভালোই চলছে। তবে একটাই দুঃখ আমার বাবা পৃথিবীতে আর নেই। যদিও আমার সন্তানও পৃথিবীর পথে আসছে।