যা আশা করেছিলাম জীবন এখানে মোটেও সেরকম ছিল না

0
855

দেশেফেরা অভিবাসী মারিয়াম, গাম্বিয়া


আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নাইজেরিয়ায়। কিন্তু যখন আমার বয়স আঠারো তখন বাবার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে গাম্বিয়া চলে আসি। এখানে লামিন নামের একজন অসাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে এবং আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। এর কিছুদিনের মাথায় আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।

আমরা স্বপ্ন দেখতাম একসঙ্গে জীবনটা কাটিয়ে দেবার। কিন্তু আমরা ভালো কাজ খুঁজে পাইনি। একদিন লামিনের এক বন্ধু তাকে ইতালিতে অনেক ভালো কিছু কাজের সুযোগ আছে বলে জানায়। এরপর লামিন চলে যায়। কিন্তু ওর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এরপর হঠাৎই একদিন ও আমার সঙ্গে লিবিয়া থেকে যোগাযোগ করে। লামিন আমাকে জানায় সে নাকি সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। যদিও ওর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং তার জায়গা হয় লিবিয়ায়। সত্যি বলতে কী, আমি না ওকে ভীষণ মিস করছিলাম। যেকারণে ওর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
মরুভূমির পথ দিয়ে আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর। কত মানুষকে আমি মরতে দেখেছি এ পথে। আমি ভয় পেয়েছিলাম এর ভেতর দিয়ে আমি যেতে পারবো কিনা ভেবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, শেষ পর্যন্ত লিবিয়ায় যেতে সক্ষম হই। আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে, আমার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাৎ ঘটতে যাচ্ছে।

যদিও আমি যা আশা করেছিলাম জীবন এখানে মোটেও সেরকম ছিল না। প্রতিদিন এতসব ভয়ংকর ঘটনা দেখতে দেখতে আমরা রীতিমত বাইরে বের হতেও ভয় পেতাম। একদিন এক রাতে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্য আমরা একটি নৌকা জোগাড় করে ফেলি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা গভীর সমুদ্রের খুব বেশি দূরে যেতে সক্ষম হয়নি। কারণ লিবিয়ান কোস্টগার্ড আমাদের ধরে ফেলে। তারা আমাদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেয় অতঃপর সেখান থেকে সোজা জেলে। তারা আমাকে আমার স্বামীর কাছ থেকে আলাদা করে দেয়। বলতে গেলে কোনো খাবার ছাড়া ক্ষুধার্ত পেটে আমরা ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়তাম।

গাম্বিয়াতে আমার অতীত জীবন কেমন ছিল তা নিয়ে ভাবতাম, যেখানে আমাদের অনেক কিছু না থাকলেও আমরা খুশি ছিলাম এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারতাম। এক মাস কারাগারে থাকার পর আমি আর কোনোকিছুই সহ্য করতে পারছিলাম না। যখন আইওম-এর কর্মী কারাগার পরিদর্শনে আসে তখন তারা আমাদের খাবার, কম্বল দিয়েছিল। তারা আমাদের গাম্বিয়ায় ফিরিয়ে নেয়া এবং পুনরেকত্রীকরণ প্রোগ্রামের সম্পর্কে বলেছিল।


আমি লামিনের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং আমরা দুজনই বাড়ি ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলাম। এরপর আমরা দুজন স্বেচ্ছায় রিটার্ন ফ্লাইটে সাইন আপ করে ফিরে আসি। নিজের দেশে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই খুশি। আমার মনে হচ্ছে আমাদের জন্য এখানে ভালো জীবন অপেক্ষা করছে। আইওএম এর সহযোগিতায় লামিন ছোটো একটি ব্যবসা শুরু করতে পেরেছে এবং আমি আশাবাদী মার মতো নিজেকে নার্স হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আবারও স্কুলে যেতে পারবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here