জাপানের টোকিওতে ২৩ জুলাই থেকে ৮ অগাস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ক্রীড়া বিশ্বের সবচেয়ে জৌলসময় ও খেলাধুলার বৃহৎ আসর অলিম্পিক গেমস। এবারের আসরে রিফিউজি অলিম্পিক টিম অংশগ্রহণ করেছিল। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রিফিউজি অলিম্পিক টিম অলিম্পিক আসরে অংশগ্রহণ করলো। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত গ্রীস্মকালীন অলিম্পিক আসরে প্রথমবারের মতো রিফিউজি অলিম্পিক টিম অংশগ্রহণ করেছিল।
কেনো রিফিউজি অলিম্পিক টিমের প্রয়োজন হলো?
২০১৫ সালে যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যূতের শিকার হয়। ওই বছর মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করে।
একই বছরে অলিম্পিক আসরের আয়োজক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) শরণার্থীদের জরুরি সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের একটি তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে শরণার্থীদের খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার পেছনে অনুদান দেয়া হয়।
ওই বছরই ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক আসরে শরণার্থী খেলোয়ারদের অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
শরণার্থী দলটি গঠনের মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীর শরণার্থীদের কাছে আশা ও পুনর্মিলনের বার্তা দেয়া হয়েছিল। সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক কঙ্গো ও ইথিওপিয়ার মোট ১০ জন অ্যাথলেট এ আসরে অংশগ্রহণ করেছিল।
সফলভাবে ২০১৬ সালে শরণার্থীদের নিয়ে গঠিত দলটি অংশগ্রহণ করার পর পরের আসর অর্থাৎ ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য আইওসি সিদ্ধান্ত নেয় (করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে অলিম্পিক গেমস স্থগিত করা হয়েছিল)।
রিফিউজি অলিম্পিক টিমের সদস্যরা কোথা থেকে এসেছিল?
রিফিউজি অ্যাথলেটস প্রোগ্রামের আওতায় অলিম্পিক স্কলারশিপের মাধ্যমে আইওসি এর সার্বিক সহযোগিতায় শরণার্থীদের মধ্য থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে এই টিমটি গঠন করা হয়। সিরিয়া, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, ইরিত্রিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইরান, আফগানিস্তান ও ক্যামেরুন থেকে ২৯ জন অ্যাথলেটকে বাছাই করা হয়েছিল। উল্লিখিত দেশসমুহের প্রায় প্রতিটিতে কোনো না কোনোভাবে সংঘাত, গৃহযুদ্ধ লেগে আছে।
কেনো রিফিউজি টিম এতটা গুরুত্বপূর্ণ?
৮২ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যূত মানুষ রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই শরণার্থী সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে। রিফিউজি অলিম্পিক টিম মূলত সৌহার্দ্য, শান্তি ও প্রেরণার বার্তা দেয়। রিফিউজি টিমের সদস্যদের প্রত্যেকেরই অবিশ্বাসরকম আত্মবিশ্বাস আছে।
তারা স্বপ্ন দেখতে পারে, লড়াই করতে পারে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে। নানারকম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বুক উঁচিয়ে টিকে থাকার যে উদাহরণ রিফিউজি অলিম্পিক টিম সৃষ্টি করেছে, তা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের শরণার্থীদের নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেবে, ঠিক একারণেই রিফিউজি অলিম্পিক টিমে গুরুত্ব এতটা!