পৃথিবীর ৯০টিরও বেশি দেশে প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। কমপক্ষে ৫ হাজার ধরনের স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যের আদিবাসী মানুষ রয়েছেন যারা ৪ হাজার ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্রপূর্ণ ভাষার চর্চা করেন । পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ আদিবাসী। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশরই বসবাস এশিয়ায়।
পৃথিবীজুড়েই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিজ ভিটাবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হার আশংকাজনকহারে বাড়ছে। অবাক করা বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক অভিবাসন ফ্রেমওয়ার্কে খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস্তচ্যুত মানুষদের বাদ রাখা হয়। আদিবাসীদের নিয়ে সবসময়ই একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে, তারা তাদের নিজ অঞ্চল ও রীতিনীতির মধ্যে গভীরভাবে আষ্টেপৃষ্টে থাকেন। কিন্তু সত্য হলো, নিজ বসতবাড়ি কিংবা এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়াদের চলমান তালিকায় প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষদের সংখ্যা।
মোটাদাগে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা ঠিক কোন কোন কারণে নিজের শেঁকড় ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন গনহালেজ।
সাধারণভাবে দেখা যায়, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা নিজেদের সংস্কৃতি ও অঞ্চলের সঙ্গে খুবই দৃঢ়ভাবে নিজেদের যুক্ত রাখেন। তাদের আবাসস্থল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহর থেকে অনেক দূরে অর্থাৎ এমনসব অঞ্চলে হয়, যেগুলো প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। তারপরও নানা কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বাধ্য হন নিজেদের বতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে। গনহালেজ উল্লেখ করেন, এর অন্যতম প্রধান কারণে মধ্যে রয়েছে সংঘাত ও নিপীড়ন। সংঘাত ও নিপীড়নের শিকার হয়ে সারা পৃথিবীতেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ স্থানান্তরিত হচ্ছে। এরপর রয়েছে জলবায়ুজনিত কারণ, তাদের ভূমি দখলসহ নানা প্রভাব। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের মতো সুযোগ থেকেও তারা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হয়; যতটুকুও পায়, তাও যৎসামান্য।
গনহালেজের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ল্যাটিন আমেরিকার ৪০ শতাংশ আদিবাসী মানুষ এখন শহরে বসবাস করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আর্থিক ও উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা ও ভালো কাজের সন্ধানে আদিবাসী মানুষ এখন বেশি শহরমুখী হচ্ছে। ২০১০ সালে এই অঞ্চলে যেখানে ৪৫ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ ছিল সেখানে ২০১৮ সালে এসে সেই সংখ্যা ঠেকেছে ৯ মিলিয়নে। আর মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক অভিবাসী আদিবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজারে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নারী। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয় যে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যখন নিজ ভূমি ছেড়ে অন্যত্র দীর্ঘদিন ধরে জীবনযাপন করেন তখন স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতির চর্চা করতে তারা ব্যর্থ হন। এর ফলে হাজার বছরের আদিবাসী ঐতিহ্য বিলীনও হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গনহালেজ।
সূত্র: আইওএম