একযুগে অবৈধপথে ইউরোপে গেছেন অন্তত ৬২ হাজার বাংলাদেশী

0
984

করোনা মহামারির মধ্যেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে যে দেশগুলোর মানুষ, বাংলাদেশ এখন সেই তালিকায় সবার শীর্ষে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত তিন হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশী এভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। আর গত একযুগে অনিয়মিতভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য বলছে, এভাবে যারা ইউরোপে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০। অবশ্য শুধু ইউরোপ নয়, করোনা মহামারির মধ্যেও শ্রম অভিবাসনের নামে মানবপাচার কিংবা ভারতে নারী-কিশোরী পাচার কোনটাই থেমে নেই। বরং এসব ক্ষেত্রে এখন সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতেই আগামীকাল ৩০ জুলাই পালিত হবে আন্তর্জাতিক মানব পাচার বিরোধী দিবস। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাই দিনটিকে মানব পাচার বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ভূক্তভোগীদের কন্ঠস্বর পথ দেখায়।’

দিনটি পালন উপলক্ষ্যে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার ‘মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও করনীয়’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ আজ সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার দিক থেকে প্রথম এটি আমাদের জন্য লজ্জার। বাংলাদেশের সঙ্গে এই তালিকায় আছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, সুদান কিংবা ইরিত্রিয়া। এই দেশগুলো যুদ্ধ বা দারিদ্রপীড়িত। বাংলাদেশের অবস্থা কিন্তু সেটি নয়। তারপরও আমাদের লোকজন এভাবে ইউরোপে যাচ্ছে। গত এক দশকে ৬২ হাজার লোক এভাবে ইউরোপে গেছে। আবার শ্রম অভিবাসনের নামে ভিজিট ভিসায় দুবাই যাচ্ছে লোকজন। ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে নারী ও কিশোরীরা। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার প্রতিরোধে আমাদের মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মামলাগুলোর বিচার হতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, মানব পাচার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দায়িত্বরত সবাইকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহীদুল আলম বলেন, জেনে বুঝে দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে হবে। প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। একইভাবে যারা দায়িত্ব পালন করেন সেই সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সবার মানবপাচার ও অভিবাসন আইনের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। ব্র্যাক, বিএমইটি, সরকারি বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজ করলে আমরা সমাজে পরির্বতন করতে পারবো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জি এস এম জাফরউল্লাহ পাচাররোধে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারি বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন আরও তৎপর হয় সে ব্যাপারে আমরা নজর রাখবো।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানবপাচার বিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরকার পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ, কারণ সব তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। তবে পুলিশ দেশে-বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে। পাচারকারীরা পার পাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here