ভারত কী আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে লুকোচুরি খেলছে?

0
737
আফগান


গত ৫০ বছর ধরে যে কয়েক হাজার আফগান নাগরিক ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা এখন নিজেদের জন্য আরো অধিকতর সুযোগ-সুবিধা দাবি করছেন। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আফগান অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থী (বিশেষ করে সিঙ্গেল মাদার ও তাদের সন্তানরা) দিল্লিতে অবস্থিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর অফিসের সামনে এ আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে আসছেন তারা। প্রধানত সন্তানদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি ও অধিকতর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দাবি আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশের।

আন্দোলনটিতে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন আফগান কয়েক বছর আগে ভারতে এসেছেন। কিন্তু এখনো তাদেরকে ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ এখনো তারা কাঙ্খিত কোনো কাজ জোটাতে পারেননি। তাদের মধ্যে হাজার হাজার আফগান এখনো শরণার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি।

ভারতে শরণার্থী বিষয়ক কোনো আইন নেই। এজন্য যারা শরণার্থী হিসেবে দেশটিতে আশ্রয়ের খোঁজে আসে, তাদেরকে ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর ফলে ভারত সরকার ও কর্তৃপক্ষের সহায়তা ছাড়া আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের বাড়ি ভাড়া অথবা কোনো কাজ খুঁজে পেতে নিদারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি তালেবানদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা আফগান শরণার্থীদের জন্য ভারত জরুরি ভিসা চালু করেছে। এই ভিসার মেয়াদ ছয় মাস।

দীর্ঘমেয়াদী ভিসার দাবি আফগানদের

ভারতে আশ্রয় নেয়া আফগান কমিউনিটির প্রধান আহমাদ জিয়া ঘানি জানান, দেশটিতে প্রায় ২১ হাজার আফগান অবস্থান করছে। ডয়েচেভেলেকে তিনি আরো বলেন, আফগানরা শরণার্থী কার্ড খুঁজছিল, যাতে করে তারা অন্যদের মতো দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে। ইউএনএইচসিআর এর তথ্যমতে, ভারতে প্রায় ১১ হাজার নিবন্ধিত আফগান আশ্রয়প্রার্থী রয়েছে। এর অর্থ এসব আফগান দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিবেচনায় রয়েছেন।

প্রায় ১০ বছর আগে আমিনা মোহমান্দ নাজরা ভারতে এসেছিলেন। তার কাছে ব্লু পেপার আছে, এর মানে দাঁড়ায়, শরণার্থী হিসেবে তিনি ভারত সরকারের বিবেচনায় রয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে অবস্থা এভাবেই চলে আসছে। তিনি অনেক বছর ধরে নিয়ম করে তার সব কাগজপত্র নবায়নও করে আসছেন। নাজলা দিল্লিতে আফগানদের জন্য দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু কয়েক বছর হলো তিনি তার চাকুরি হারিয়েছেন। তার ছেলে এমাদ যখন ভারতে আসে তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। এখন এমাদ ১৬ বছরের কিশোর। যদিও এমাদ এখনো হাইস্কুল পেরোতে পারেনি। কারণ ফি দিতে না পারার কারণে ছয় মাস আগে তাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ‘আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন, আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম।’ আক্ষেপ করে এমাদ আরো বলছিল, ‘এখন আমার কিছুই নেই।’

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) নয়াদিল্লির কার্যালয়ের বাইরে আফগান শরণার্থীরা সাহায্য করার আহ্বান জানায়। ছবি: রয়টার্স


প্রতিবাদের অগ্রভাগে সিঙ্গেল মাদার ও শিশুরা

বেশিরভাগ নারী বলেছেন, আফগানিস্তানে থাকা পরিবারের কাছ থেকে তারা কিছু অর্থ পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাদেরকে আরো কঠিন অবস্থার দিকে নিয়ে গেছে। আন্দোলনে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলছিলেন, তার জীবনসঙ্গী আফগানিস্তানে তালেবান যোদ্ধা ছিল। দিল্লিতে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় কোনো রোজগার ছাড়াই। আফগানিস্তানে অনেক নারী জোরপূর্বক বিবাহের শিকার হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

অনেকে অভিযোগ করে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশগুলোতে পুনর্বাসনের জন্য ইউএনএইচসিআর তাদেরকে কোনো সহযোগিতা করেনি। একজন রাগান্বিত স্বরে বলেন, জাতিসংঘের এই সংস্থাটি শুধু ‘সাপোর্ট লেটার’ই ইস্যু করতে পারে। ‘আইনগত স্বীকৃতি ছাড়া ভারতে তাদের আসলেই খুব বেশি কিছু করার নেই। তাই অর্থনৈতিকভাবেও তারা দুর্বল’-বলেন চয়নিকা সাক্সেনা। ভারতে আফগান প্রবাসী বিষয়বস্তু নিয়ে বর্তমানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর-এ ডক্টোরাল থিসিস করছেন তিনি।

গুলবাশরা আহমাদ আফগানিস্তানে একজন আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু ২০১৯ সালে ভারতে আসার পর তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। আদতে গুলবাশরার মতো অনেকেই স্বদেশ ছেড়ে ভারতে আসার পর প্রত্যাশিত কোনো কাজই জোটাতে পারেননি।


কেনো তাদের প্রথম সারিতে আসার অধিকার নেই?

জাতিসংঘের ১৯৫১ শরণার্থী কনভেনশন এবং শরণার্থীদের অবস্থা সম্পর্কিত ১৯৬৭ প্রটোকলের স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ভারত। দেশটিতে আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীদের প্রতি অসঙ্গতিপূর্ণ নীতি বিদ্যমান রয়েছে। এ নীতি তারা যে দেশ থেকে এসেছে সেখানকার সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে অথবা দেশীয় রাজনীতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত সরকার তিব্বতি ও শ্রীলঙ্কানদের সহায়তা করলেও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির দোহাই দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করছে না।

আরো একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়, ১৭ আগস্ট, নয়া দিল্লি ঘোষণা দিয়েছিল তারা সব ধর্মের আফগানদের আশ্রয় দেবে। কিন্তু দেখা গেল, শেষমেষ তা শুধু হিন্দু আফগান ও শিখদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।


সূত্র: ডয়েচেভেলে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here