পোল্যান্ড আশঙ্কা করছে যে, দেশটির পূর্ব বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে শত শত সশস্ত্র অভিবাসীকে ঠেলে দিয়ে বেলারুশ বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে প্রায় ১২ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে পোল্যান্ড সরকার।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বেলারুশের সঙ্গে পোল্যান্ডের কুজনিকা সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিপুল জনস্রোত থেকে কিছু অভিবাসন প্রত্যাশী কাঁটাতারের বেড়া কেটে পোল্যান্ড সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করছে।
পোলিশ সরকারের মুখপাত্র পিওর মুলার জানিয়েছেন যে, ‘পোল্যান্ডের পূর্ব সীমান্তের কাছে প্রায় ৪ হাজার অভিবাসী জড়ো হয়েছিল এবং যে কোনও সময় তারা সশস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।’
পোলিশ টিভি জানিয়েছে, কুজনিকাতে জড়ো হওয়া অনেক অভিবাসীর সঙ্গে সশস্ত্র ব্যক্তি ও কুকুর ছিল।
পোল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান স্ট্যানিস্লো জারিন বলেছেন, অভিবাসীরা বেলারুশিয়ান সশস্ত্র ইউনিটের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এর আগে পোল্যান্ডের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিওত্র ওয়াওরজিক বলেছিলেন যে, ‘বেলারুশ একটি বড় ঘটনা ঘটাতে চায়, বিশেষত গুলি চালানো এবং হতাহতের ঘটনা।’
পোল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, বেলারুশ এই সমস্যাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাজিয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বেলারুশের বিতর্কিত নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।
বেলারুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পোলিশ বিবৃতিকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সীমান্তে হাজার হাজার সৈন্য সরিয়ে চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ওয়ারশকে অভিযুক্ত করেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় ইইউ এবং জাতিসংঘের কাছে জোরালো প্রতিক্রিয়ার দাবি জানিয়েছেন বেলারুশের নির্বাসিত নেতা সভিয়েতলানা সিখানুস্কায়া।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এই অভিবাসন প্রত্যাশীরা মূলত ইরাকের কুর্দ সম্প্রদায়ের লোক। তারা বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। এর আগে এই পথে অভিবাসন প্রত্যাশীরা যাতায়াত করতেন না বলে দাবি পোল্যান্ডের।
সাম্প্রতিক সময়ে বেলারুশ থেকে ইইউ এবং ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়াতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যাদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে এসেছেন। এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। সীমান্তে রাতারাতি তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে গেছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অভিবাসী মারা গেছেন।
গত কয়েক মাস ধরেই অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে পোল্যান্ড। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য, ‘বিতর্কিত নেতা’ আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং তার প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একটি রাজনৈতিক খেলার অস্ত্র হিসাবে এসব মানুষদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই পক্ষের রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে বিপাকে পড়ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা।