শুক্রবার, 22 নভেম্বর, 2024

অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে ঢালাওভাবে ‘হঠাৎ মৃত্যু’ বলার কারণ কী?

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত বাংলাদেশী কোনো শ্রমিক মারা যাওয়ার পর এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শোনা যায়, ‘আকস্মিক বা হঠাৎ মৃত্যু’ হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘হঠাৎ মৃত্যু’ বলে চাউর করা হয়।

সাধারণ অর্থে, এই ‘হঠাৎ মৃত্যু’ উল্লেখ করার কারণ হলো, এই মৃত্যুর জন্য প্রতিষ্ঠান বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ দায়ী নয়, প্রাকৃতিকভাবেই হঠাৎ করে শ্রমিক মারা গেছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত মারা যাওয়া এসব শ্রমিকদের সবাই কি কোনো কারণ ছাড়া ‘হঠাৎ মৃত্যু’র মুখে পড়ে? নাকি নিজেদের দোষ এড়াতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই এমনটি বলে?

শ্রমিকদের এই ‘হঠাৎ মৃত্যু’ ঘটনায় এবার খোদ সন্দেহ পোষণ করলো মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস) ও লেবার ল রিফর্ম কোয়ালিশনের (এলএলআরসি)।

ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস) এর একজন জেষ্ঠ্য বিশ্লেষক জানিয়েছেন, অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনায় গত দুই বছর ধরে ‘হঠাৎ মৃত্যু’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে লেবার ল রিফর্ম কোয়ালিশনের (এলএলআরসি) পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা শীর্ষক প্রতিবেদন ২০২২-এর প্রাথমিক ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে মালয়েশিয়ার সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী তাশনি সুকুমার বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনাকে ঢালাওভাবে ‘হঠাৎ মৃত্যু’ শব্দবন্ধটির ব্যবহার নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, ‘মহামারী চলাকালীন ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ মৃত্যুর কোনো বিস্তারিত বিবরণ ছাড়াই অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুকে ‘হঠাৎ মৃত্যু’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

তাশনি আরও বলেন, ইউনিয়নের নেতারা দাবি করেছেন যে, নিয়োগকর্তারা প্রায়শই জবাবদিহিতা এড়াতে কর্তৃপক্ষকে উৎকোচ প্রদান করে থাকে। একইসঙ্গে নিয়োগকর্তা ও কর্তৃপক্ষ ক্লান্তি ও অন্যান্য কাজ-সম্পর্কিত অসুস্থতার কারণে ঘটা মৃত্যুকেও ‘আকস্মিক মৃত্যু হিসাবে প্রচার করে।

‘সরকারকে অবশ্যই অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু এবং আঘাতের রেকর্ড রাখার ক্ষেত্রে বৃহত্তর ও জোরালো দায়িত্ব নিতে হবে। এবং এ কাজের সত্যতা নিশ্চিত করতে আকস্মিক মৃত্যুর দাবিগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত কাজ পরিচালনা করতে হবে’-বলেন তাশনি।

তার মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের নেতারাও কিছু ক্ষেত্রে হত্যার মতো ঘটনাকেও আত্মহত্যা হিসাবে জাহির করে থাকে।
‘যদিও এর জন্য সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো প্রমাণ নেই, তারপরও ধারণা, কথিত আত্মহত্যার ঘটনা ফটোগ্রাফিক ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে অকল্পনীয় দক্ষতার মাধ্যমে সম্পাদিত হওয়ার ফলে এই তত্ত¡ সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে’-যোগ করেন তিনি।

ইতোমধ্যে এফএমটি এই অভিযোগগুলির বিষয়ে মন্তব্য এবং খোঁজখবর নেওয়ার জন্য পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি হলো অভিবাসী কর্মীদের জন্য করোনার প্রতিরক্ষামূলক অভাব, পেশাগত সুরক্ষার দুর্বলতা, স্বাস্থ্যের মান এবং নারী অভিবাসী কর্মীদের ঝুঁকি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি।

এই সমস্যাগুলি সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারগুলোর কোনো সদস্যের অতীতের মৃত্যুর জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য একটি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মূল দেশে মৃতের পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটি আন্তঃসীমান্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করেছেন তাশনি।

এছাড়া ‘একটি কর্পোরেটিয় মানব হত্যাকাণ্ড বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা উচিত। যা কিনা কোম্পানিগুলিকে কর্পোরেট ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করবে এবং ফৌজদারি অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেবে’-মত তাশনির।

তিনি উল্লেখ করেন, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশে এরকম আইন ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যেখানে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর একটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠানকে কোনও লঙ্ঘনের প্রতিকারের জন্য, তার ব্যর্থতাগুলিকে সবার সামনে তুলে ধরা বা কারাগারে সাজা দেওয়ার আদেশ দেওয়ার নিয়ম থাকবে।

সূত্র: ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা