বৃহস্পতিবার, 21 নভেম্বর, 2024

বিদেশফেরত নারীদের স্বপ্ন বুনবে এসডিসি’র নতুন প্রকল্প

সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এর অর্থায়নে ব্র্যাক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর যৌথ অংশীদারিত্বে ছয়টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দেশের আটটি জেলায় ‘রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নি মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকরা কেমন আছেন-এমন সহজ প্রশ্নের সরল কিংবা সুখকর কোনো উত্তর নেই কারো কাছে। বিপরীতে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই উত্তর বর্তমান যে, ২০১৭-২০২২ সাল অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ৭০৯ জন নারী অভিবাসী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে মারা গেছেন। করোনা মহামারি চলাকালে ৫০ হাজার নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ৫২.২ শতাংশ সম্মুখীন হয়েছেন মানসিক নিপীড়নের, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১১ শতাংশ। ৭৯ শতাংশ নারী দেশে ফিরে কোনো ধরনের কাজের সঙ্গেই যুক্ত হতে পারেননি।

হৃদয়বিদারক আর মর্মান্তিক এসব তথ্য-উপাত্ত জানান দেয়, যে মানুষগুলো নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতা আর দেশের উন্নয়নে ঘর-সংসার-সন্তান ত্যাগ করে অজানা দেশে গিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাবলম্বিতা অর্জনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর-সেই তারাই বিদেশ-বিভুঁইয়ে দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়েছেন, শিকার হয়েছেন নিপীড়ন, নির্যাতন আর হত্যাকাণ্ডের। এসবের বাইরে, বিশেষ করে বেঁচে যাওয়া কত সংখ্যক হতভাগ্য নারী শ্রমিক যে দেশে ফিরে পারিবারিক ও সামাজিক নানা ধরনের কুৎসা-অপবাদ আর চাপের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, যার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই।

দুঃখজনক হলেও সত্য, অসহায়ত্বের সম্মুখীন বিপুল সংখ্যক এ অভিবাসী নারী শ্রমিক সরকার কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন কার্যকর কোনো সহযোগিতা পাননি, যার মধ্য দিয়ে তারা সার্বিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন।

ঠিক এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যে আশা জাগানিয়া খবর হলো, বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকদেরকে ইতিবাচক ও টেকসই পুনরেকত্রীকরণ তথা তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য ‘রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নি মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শিরোনামে একটি প্রকল্প চালু হয়েছে।

সাত হাজার বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিককে টেকসইভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণ করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে প্রকল্পটি। প্রকল্পটির প্রধান বিশেষত্ব, বিদেশফেরত অভিবাসীদের নিয়ে বাস্তবায়িত পূর্ববর্তী বেশিরভাগ প্রকল্পেই যেখানে পুরুষ অভিবাসীদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, সেখানে এই প্রকল্প অধিক ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকদের পুনরেকত্রীকরণে গুরুত্ব দিচ্ছে।

সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এর অর্থায়নে ব্র্যাক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর যৌথ অংশীদারিত্বে ছয়টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দেশের আটটি জেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাগুলো যথাক্রমে কারিতাস, কেএমএসএস, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র, মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, আভাস ও বাস্তব।
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রত্যাবর্তিত অভিবাসী শ্রমিকদের তালিকাভ‚ক্ত শুরু হয়েছে এবং তাদের সেবা প্রদান চলমান।
‘রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নি মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কার্যক্রম এখন কোন পর্যায়ে আছে তা অবহিত করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অংশগ্রহণে গত ৩-৪ মে দুইদিন ব্যাপী অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনার কারিতাস ট্রেইনিং সেন্টারে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে উল্লিখিত ছয়টি সংস্থার কর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করেন এবং মিথস্ক্রিয়ামূলক আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ বিনিময় করেন।

প্রকল্পটির অগ্রগতি ও গতিধারা প্রত্যক্ষভাবে পরোখ করতে অভিবাসী ডটকম দুইদিনব্যাপী এ সভা পর্যবেক্ষণ করে। মূলত এ সভা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বরোপ করছেন সংশ্লিষ্টরা

 বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকরা যাতে সর্বাধিক সংখ্যায় ও সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রাপ্ত হয়, তা নিশ্চিত করা।
 শুধু অর্থনৈতিক সহায়তায় সীমাবদ্ধ না থেকে মানসিক ও সামাজিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে সংকট নিরসনের মধ্য দিয়ে সমাজের মূল স্রোতধারার সঙ্গে তাদেরকে খাপ খাইয়ে স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা
 প্রকল্পের আওতাধীন সুবিধাভোগীরা যাতে পুনরায় বিদেশ না যায়, সে বিষয়ে নিরুৎসাহে যথাসম্ভব জোরারোপ করা।
 বিদেশ, বিশেষ করে সৌদি আরব প্রত্যাগত নারী অভিবাসী শ্রমিকরা সেখানে যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হন-নানা কারণে সেসব বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে, তাদেরকে এমনভাবে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং প্রদান করতে হবে, যেন তারা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মীকে বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে এবং কোনো চাপ ছাড়াই তারা তথ্য প্রদান করে।
 বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের মূল সমস্যা উদঘাটনের পর সমাধানে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া, এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির (বিশেষ করে তথ্য বিষয়ক) গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মীকে।
 বিদেশফেরত নারী অভিবাসী কর্মীদের রোজগারকৃত অর্থ বা সঞ্চয়ের কার্যকর বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, প্রয়োজন পথ দেখানো।
 স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তথা এলজিআইকে প্রকল্পের কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করা, যাতে করে বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকরা যেকোনো প্রয়োজনে তাদের দ্বারস্থ হতে পারে এবং উপযুক্ত সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
 বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকরা কুসংস্কারসহ নানাবিধ সামাজিক চাপে করুণ অবস্থার মধ্যে পড়ে। এ থেকে উত্তরণ তথা তাদের পক্ষে সামাজিক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনয়নে ধর্মীয় নেতারা যেন প্রয়োজনীয় বক্তব্য প্রদান করে এবং সমাজে নারী পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত হয়, সে সম্পর্কে তারা যেন জোর দেয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
 বিদেশফেরত অনেকে আর্থিকভাবে ভালো অবস্থায় থাকেন, তারা কীভাবে তাদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো কিছু করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে রেফারেলের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানসিক সহযোগিতা প্রদান করা
 নিজেদের মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকরা যাতে করে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদেরকে সেখানে যুক্ত করার চেষ্টা করা।
 এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিক ও তার পরিবারকে যুক্ত করে উঠান বৈঠকের আয়োজন করার মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যাসহ নানাবিধ বিষয় উত্থাপন করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। একারণে উঠান বৈঠকের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া।
 যেহেতু প্রকল্পটি নারী অভিবাসী শ্রমিকদেরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেহেতু এ বিষয়ে সংবেদনশীলতাও জরুরী। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ ও পুরুষালি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয়গুলো প্রকল্পের এগিয়ে চলাকে প্রভাবিত করতে পারে। আর একারণে এ অবহিতকরণ সভায় ‘জেন্ডার অ্যান্ড ফেমিনিস্ট অ্যাপ্রোচ, জেন্ডার অ্যানালাইসিস অ্যান্ড কোয়েশ্চেনারিজ শিরোনামে অধিবেশন পরিচালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন। কোনো ইজম অথবা বাদকে এককভাবে অগ্রাধিকার না দিয়ে মানুষ ও ব্যক্তির জায়গা থেকে জেন্ডার বিষয়টিকে বোঝা এবং সেভাবে এগিয়ে চলার দিকে তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।

একইসঙ্গে পুরুষালি ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি নারীকে কীভাবে গ্রাস করে এবং একমুখী চর্চা জিইয়ে রাখে সে বিষয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। মূলত রাফিজা শাহীন এ অধিবেশনটি উপস্থিত সবার মধ্যে একধরনের উৎসাহব্যঞ্জনা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নারী-পুরুষ-সমতার বিষয়টি নিয়ে অর্জিত জ্ঞান প্রকল্প কর্মীরা মাঠপর্যায়ে শতভাগ প্রয়োগ করতে পারলে এ প্রকল্প অনন্য এক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন মাঠপর্যায়ের কর্মীরা

 প্রকল্পের গাইডলাইন অনুযায়ী ২০২০ সালে বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের বেনিফিশিয়ারি বা সুবিধাভোগীর আওতায় আনার কথা বলা হলেও, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। তাদের বক্তব্য, ২০১৯ বা তারও আগে থেকে বিদেশফেরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক করুণ দশার মধ্যে আছেন, তাদেরকে তালিকাভ‚ক্ত করার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, প্রকল্পের নির্দেশনা অনুসারে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কীভাবে তাদেরকে চলমান প্রকল্পে অন্তর্গত করা যায়, তা নিয়ে বিবেচনার অনুরোধ রয়েছে তাদের।
 বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের এই প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য তাদেরকে সনাক্তকরণের জন্য নূন্যতম পাঁচটি বিষয় যাচাইকরণ করার নিয়ম রয়েছে, সেগুলো হলো: পাসপোর্ট (তথা পাসপোর্ট নম্বর), দেশে আগমনের তারিখযুক্ত সিল, বহির্গমনের তারিখ যুক্ত সিল, শ্রমিক ভিসার কপি ও ভোটার আইডি কার্ড। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এমনও অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হন যে, অভিবাসী শ্রমিক বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন ঠিকই। কিন্তু তার কাছে থাকা পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র হারিয়ে গেছে কিংবা দালালচক্র হাতিয়ে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের তালিকাভ‚ক্তির বিষয়টি নিয়ে আরো কি করা যায় সে বিষয়ে স্পষ্টতা আনয়ন।
 প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কঠিন ও অযৗক্তিক শর্তের জালে বন্দি হতে হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এ সমস্যা সমাধানে দ্রæত ও যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ।

 পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি শ্রমিকরা আসা যাওয়া করছে। এদের অনেকে মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে সেখানে কাজ করতে যায়। এদের মধ্য থেকে সত্যিকার অর্থে যাদের সহায়তা প্রয়োজন, তাদেরকে প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে কিনা, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা জরুরী।
 মনোঃসামাজিক কাউন্সেলিং দেয়ার ক্ষেত্রে এখনো বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে নারীরা তাদের সঙ্গে ঘটা তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে সঙ্কোচ বোধ করেন ও তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে অবহিতকরণ সভার আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, খুলনা-এর উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইকবাল হোসাইন। সভায় তিনি বিদেশফেরত জনগোষ্ঠী নিয়ে সরকারের নীতি ও তাদের প্রদত্ত সেবাসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত মাঠকর্মীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

অভিবাসী ডটকম এর সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রকল্পটিতে নারী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রসঙ্গে কথা বলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন। তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পটি ডিজাইন করা হয়েছে বিদেশফেরত নারী অভিবাসী শ্রমিকদেরকে গুরুত্ব দিয়ে। কারণ অভিবাসী শ্রমিক বলতে নারী পুরষ উভয়কে বোঝালেও নারীর যুদ্ধটা একেবারে আলাদা। পরিবার, সন্তানকে পেছনে ফেলে যখন সে বিদেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়, তখন সমাজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচকভাবে দেখে, মূলত হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধাক্কা দিয়ে সে ঘর ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে। এরপর আবার ওখানে গিয়ে আরেকটা যুদ্ধ তাকে করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যারা গৃহস্থালি পেশায় যায়, তখন তারা যে ধরনের চ্যালেঞ্জ ও নিপীড়নের মুখে পড়ে, তা অবর্ণনীয়। এরকম পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার পর তারা পড়েন আরো বড় সংকটে। পরিবার ও সমাজ থেকে তারা নেতিবাচকতার মুখোমুখি হন। এ কারণে তাদের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার এ প্রকল্পের।

অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে উপকুলীয় এলাকায় বসবাসরত বিদেশফেরত অভিবাসীদের উন্নয়নে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে কারিতাস, বাংলাদেশ এর। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে কাজ করছে কারিতাস, খুলনা।

মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে কারিতাস খুলনা রিজিওনের রিজিওনাল ডিরেক্টর দাউদ জীবন দাস বলেন, ‘আমরা সবাই জ্ঞাত যে, বিদেশে গিয়ে আমাদের অভিবাসী শ্রমিক ভাই-বোনেরা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়, কারিতাস বাংলাদেশ সবসময়ই এই মানুষদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। আমরা নারী পুরুষের সমতা, ক্ষমতায়ন ও সমসমর্যাদায় বিশ্বাসী। বিদেশ থেকে ফিরে আসা অভিবাসীরা যে ধরনের মানসিক, সামাজিক অবস্থার মধ্যে থাকে, তা সত্যিই দুঃখজনক। এই নেতিবাচক অবস্থা থেকে তাদেরকে ইতিবাচক ধারায় যেন কারিতাস প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, সে কারণেই এই প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের যুক্ত হওয়া। আসলে আমরা যে ধরনের নীতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করি, তার সঙ্গে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যেও মিল আছে। আর সে কারণেই আমাদের যৌথ পথচলা।’

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা