অপ্রতিরোধ্য রুপার্ট মারডক…

0
889

 

বিশ্বের প্রতাপশালী মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন ১৯৮৫ সালের চার সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত মারডককে নিয়ে এদিন একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে প্রকাশিত সেই সংবাদটি পরিমার্জিত করে তুলে ধরা হলো।


অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক স্বাধীন আমেরিকান টেলিভিশন স্টেশনগুলির নেটওয়ার্ক অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা সরিয়ে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন। মারডক (৫৪) ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।।মারডক সম্প্রতি টোয়েন্টিন্থ ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশনের ৫০% শেয়ার ক্রয় করেছেন এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের কেটিটিভিসহ দেশের বৃহত্তম টেলিভিশন স্টেশনগুলির বৃহত্তম গ্রুপ মেট্রোমিডিয়া কেনার পরিকল্পনা করছেন।


রুপার্ট মারডকের বাবা ছিলেন বিখ্যাত যুদ্ধবিষয়ক সাংবাদিক ও সংবাদপত্র প্রকাশক। মারডকও বাবার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি তার বাবার সংবাদপত্র উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন। সানডে মেইল ও নিউজ হলো তাদের মালিকানাধীন দুই সংবাদমাধ্যম। পরবর্তীতে তিনি আরো অসংখ্য মিডিয়া প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়েছিলেন। ১৯৭০ দশকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম কেনা শুরু করেন। তিনি বিনোদন শিল্পেও নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিলেন; কিনেছিলেন টোয়েন্টি সেঞ্চুরি ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশন। ২০১৭ সালে টোয়েন্টি ওয়ান সেঞ্চুরি ফক্স ইনকর্পোরেশন বিক্রি করে দেন ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির কাছে। এপর্যায়ে জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর অন্যতম ধনী ও মিডিয়া জগতের শক্তিধর এ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে।


পেছনের ক্যারিয়ার


১৯৩১ সালের ১১ মার্চ রুপার্ট মারডক জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোটো ফার্মে। স্কটিশ গ্রামে মারডকের বাবা মা দুজনই চলে এসেছিলেন বলে পরিবারটির নামকরণ করা হয়েছিল ক্রুডেন ফার্ম। ক্রুডেন ফার্মের ঘর ছিল ঔপনিবেশিক ছাঁচে গড়া পাথরে নির্মিত ভবন । যেখানে ছিল পেইন্টিং, বড় পিয়ানো ও অসংখ্য বইয়ের সম্ভার । এখানে মারডক তার দারুণ এক শৈশব পার করেছেন। মারডকের মা তার সন্তানের শৈশব সম্পর্কে এভাবে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, এটা খুবই সাধারণ শৈশব ছিল। না ছিল বাড়তি কিছু আবার না ছিল বাহুল্যতা। আমার মনে হয় ও ভাগ্যবান ছিল এই অনিন্দ্যসুন্দর জায়গায় বড় হতে পেরে। সবমিলিয়ে আপনি একে নান্দনিক শৈশব বলতে পারেন ।’

১৯৪৯ সালের সাগর পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওরচেস্টার কলেজে যোগ দেয়ার আগে মারডক স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন গিলং গ্রামার থেকে। এটি অস্ট্রেলিয়ার খুবই প্রসিদ্ধ বোর্ডিং স্কুল।

অসাধারণ গতিতে মারডক তারুণ্য পার করতে করতে হঠাৎই তার বাবা মারা যান ১৯৫২ সালে। এরপর মারডকদের মালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলোর দায়িত্ব তার ওপর এসে বর্তায়। এরপরের গল্প তো ইতিহাস। মারডক তার নিজ সৃষ্টিশীলতা দিয়ে একের পর এক গণমাধ্যম সামনে নিয়ে এসেছেন এবং নিজেকে গড়ে তুলেছেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এক মিডিয়া মোগল হিসেবে।

ইংল্যান্ড জয় করে মারডক মার্কিন মুল্লুকেও তার জয়ের হাতকে প্রসারিত করেছেন। এখানে এসে তিনি ১৯৭৩ সালে অধিগ্রহণ করেন টেক্সাসভিত্তিক ট্যাবলয়েড স্যান অ্যান্টোনিয়ো নিউজ। যে কৌশলে তিনি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন, সে পথ ধরেই মার্কিন মুল্লুকে সফল হতে থাকেন তিনি। ১৯৭৪ সালে জাতীয় ট্যাবলয়েড দ্য স্টার প্রতিষ্ঠা করেন, ১৯৭৬ সালে কিনে নেন নিউ ইয়র্ক পোস্ট। ১৯৭৯ সালে মারডক প্রতিষ্ঠা করেন নিউজ কর্পোরেশন। যুক্তরাষ্ট্রে তার মালিকানাধীন আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের মধ্যে রয়েছে শিকাগো সান টাইমস, দ্য ভিলেজ ভয়েজ, নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন। যুক্তরাজ্যে তার রয়েছে টাইমস ও সানডে টাইমসের মতো বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম।


১৯৮৫ সালে টোয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশন কিনে নেন। ১৯৯০ সালে তিনি স্টার টিভি প্রতিষ্ঠা করেন, এটি হংকংভিত্তিক টেলিভিশন সম্প্রচার কোম্পানি। সেই যে শুরু, এরপর থেকে আজ অবধি মারডক সাম্রাজ্যের পতন তো ঘটেইনি বরং সে সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করছে দ্বিগুণ গতিতে। এখনো তিনি গড়ে তুলছেন একের পর মহীরুহ সব গণমাধ্যম। আসলে তার নিজ হাতে পরিচালিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো এসব সংবাদমাধ্যমের দ্বারা বহিঃপ্রকাশ ঘটে মিডিয়া মোঘল হিসেবে কতোটা সার্থক রুপার্ট মারডক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here