অস্ত্র বিক্রি করে ইউক্রেনকে সহায়তার ব্যাপারে তুমুল আগ্রহ উদ্দীপনা দেখা গেলেও দেশটি থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের গ্রহণের ব্যাপারে ঢিলেঢালা মনোভাব পোষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে, বছরে এক লাখ ইউক্রেনীয়কে গ্রহণ করবে তারা। যদিও আনুপাতিক হারে এ সংখ্যা খুবই নগণ্য। ঠিক এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আবার ‘ইউনাইটেড ৪ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় ইউক্রেনীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে একটি বিধি চালু করেছে হোয়াইট হাউজ।
এর ফলে গত সোমবার দুপুর থেকে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদেরকে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। নতুন নীতির উদ্দেশ্য হলো সীমান্তে ‘মানবিক ভিসা’ প্রত্যাশী ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা কমানো।
নতুন এই প্রোগ্রাম সোমবার কার্যকর হয়েছে। এই প্রোগ্রামের আওতায় ইউক্রেনীয়দের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য দুই বছরের মানবিক ভিসা দেওয়ার জন্য আবেদনগুলি যাচাইবাছাই করার কথা। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, এই নীতি ইউক্রেনীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বদলে মেক্সিকো সিটি বা ইউরোপে আশ্রয় নিতে বাধ্য করবে।
যুদ্ধের কবলে পড়ে প্রাণ বাঁচানোই যেখানে দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে আরো যেসব শর্ত যুক্ত করে দেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা সত্যিই কষ্টকর ও পীড়াদায়ক ইউক্রেনের মানুষদের জন্য। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১. তাদের অবশ্যই বন্ধু, পরিবার বা একটি বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে, যারা তাদেরকে দুই বছর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্পন্সর করতে ইচ্ছুক, ২. অবশ্যই তাদের টিকা নেয়া থাকতে হবে, ৩. এছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড চেক পাস করতে হবে।
এদিকে তিজুয়ানা বিমানবন্দরে ইউক্রেনীয়দের অভ্যর্থনা জানানো স্বেচ্ছাসেবী অলিয়া ক্রাসনিখ বলেছেন, ‘আমরা তাদের বলছি তারা বিদ্যমান নিয়মের বাইরে যেতে পারবে না।’ ক্রাসনিখ আরো বলেছেন যে, তারা অভিবাসীদের মেক্সিকো সিটিতে যেতে বলছে। ‘এটি একটি খুব আবেগপূর্ণ সময়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবার তারা কী করবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ ভেঙে পড়েছে এবং কাঁদছে।’
তিজুয়ানা আশ্রয় কেন্দ্রে ইউক্রেনীয়দের অস্থায়ীভাবে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এখানে গত তিন সপ্তাহ ধরে হাজার হাজার অভিবাসীকে রাখা হয়েছে। যদিও বর্তমানে সেটি প্রায় খালি অবস্থায় পরে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, এটি চার মে পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং যারা সেখানে থাকবে, তারা মেক্সিকো সিটিতে ফিরে আসার জন্য পরিবহন সুবিধা পাবেন। এই শহরে যারা নিজেদের আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে দাবি করবে, তাদের জন্য সেখানে আরেকটি আশ্রয়শিবির বানানো আছে।
‘তারা আমাদের একটি রান্নাঘর, বাথরুম এবং ঝরনাসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র সরবরাহ করতে চলেছে। সেখানে সবকিছু থাকবে, তাই আমরা সত্যিই খুশি, মেক্সিকান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ’-বলছেন স্বেচ্ছাসেবক ভ্লাদ ফেডোরশিন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) এর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্রায় তিন হাজার ইউক্রেনীয়কে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে অরক্ষিত বলে আখ্যায়িত করে সীমান্ত অতিক্রম করে তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল।
বলা হচ্ছে, ইউরোপ থেকে আসার পর মেক্সিকো ইউক্রেনীয়দের অভিবাসী পর্যটক ভিসা দেবে। তারপর অভিবাসীরা সীমান্ত অতিক্রম করার আগে সীমান্তের শহরগুলিতে, প্রাথমিকভাবে তিজুয়ানা ভ্রমণ করবে। কিন্তু নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, এই রুটটি আর ইউক্রেনীয়দের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তিজুয়ানার অভিবাসন বিষয়ক অফিস বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর আনুমানিক ১২ হাজার ইউক্রেনীয় অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিজুয়ানাকে ব্যবহার করেছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রে এন. মায়োরকাস সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ রাশিয়ান আগ্রাসন থেকে পালিয়ে আসা এক লাখ ইউক্রেনীয় এবং অন্যদের মানুষদেরকে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানাতে রাষ্ট্রপতি বাইডেনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরে গর্বিত।’ তিনি রাশিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘ইউক্রেনের জনগণ তাদের নিজ দেশে পুতিনের অযৌক্তিক আক্রমণের কারণে অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
সূত্র: এবিসি