ইউরোপের প্রবেশদ্বার ভূমধ্যসাগরে বহমান মৃত্যুর রথ যেন থামছেই না। জাতিসংঘ ধারণা করছে শুধুমাত্র এই বছর, ভূমধ্যসাগরে প্রায় ১৬০০ অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) অনুমান করেছে যে, ২০১৪ সাল থেকে ২৩ হাজার মানুষ রিকেট বোট বা রাবার নৌকায় চড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় মারা গেছে। ভূমধ্যসাগরে এই বছর মৃতের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি। একই সাত বছরের সময়কালে, ইংলিশ চ্যানেলে ১৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ইতালিতে আইওএম-এর মুখপাত্র ফ্লাভিও ডি গিয়াকোমো বলেছেন, ‘গত সপ্তাহে লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় দুটি পৃথক ঘটনায় ৮৫ জন মারা গেছে। কিন্তু ইউরোপ এই ঘটনাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না।’
আরো পড়ুন ▪ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ে বিলীন অজস্র জীবন ▪ভূমধ্যসাগরের অভিবাসীদের জন্য ইউরোপ দায়বদ্ধ ▪ভূমধ্যসাগর ‘ডুবে’ গেছে, বেলারুশ-পোল্যান্ড জেগে উঠেছে ডি গিয়াকোমো বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটি নৈকট্যের প্রশ্ন। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মধ্যে যা ঘটেছে তা নিয়ে মিডিয়ার মনোযোগের বড় কারণ হচ্ছে- এটি নতুন ঘটনা। ইউরোপ মহাদেশের মধ্যকার সংঘটিত বিষয়গুলোকে ইউরোপের সমস্যা হিসেবে মনে করা হয় না; সাধারণত এগুলোকে ইউরোপের বাহ্যিক সীমানায় রাখা হয
এই বছর ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত এবং মারাত্মক অভিবাসী রুট হল মধ্য ভূমধ্যসাগর, যেখানে অভিবাসন প্রত্যাশীরা গাদাগাদি করে ডিঙ্গি নৌকায় চেপে লিবিয়া এবং তিউনিসিয়া থেকে এবং কিছু ক্ষেত্রে তুরস্ক থেকে ইতালির দিকে যাত্রা করে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই বছর প্রায় ৬০ হাজার মানুষ সমুদ্রপথে ইতালিতে এসেছে এবং ১২০০ জন মারা গেছে বা যাত্রাপথে নিখোঁজ হয়েছে।’ নিখোঁজের সংখ্যা জাহাজডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছে।
অভিবাসী উদ্ধার কর্মীরা বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, মধ্য ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকা ৪৩০ জন যাত্রী নিয়ে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এবং ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। দাতব্য সংস্থা সি-ওয়াচ দ্বারা পরিচালিত আরেকটি নৌকা উদ্ধারকৃত ৪৬৩ অভিবাসীকে নামানোর জন্য নিরাপদ বন্দর খুঁজছিল তখন।
এদিকে, গত বছর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের আরো একটি বিপজ্জনক রুট মানব পাচানকারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে অভিবাসীরা স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর আশায় সাধারণ কাঠের নৌকায় সেনেগাল, মৌরিতানিয়া বা মরক্কো থেকে যাত্রা করেছে।
তাদের মধ্যে কিছু নৌকা আফ্রিকার উপকূল থেকে বেশ খানিক পথ পাড়ি দিয়ে ডুবে যায় এবং অন্যগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়, আবার কিছু ক্ষেত্রে আটলান্টিকের অতল গভীরে তলিয়ে যায় কেউ কেউ। ডি গিয়াকোমো বলেছেন, ‘পশ্চিম আফ্রিকার এ পথটি দীর্ঘ ও বিপজ্জনক।’
আইওএম এই বছর ক্যানারি রুটে ৯০০ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিবন্ধন করেছে। ডি গিয়াকোমো বলেছিলেন, তবে প্রকৃত সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে।’
দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় এই সপ্তাহে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, মধ্য ভূমধ্যসাগরে ইতালির নেতৃত্বে ইউরোপীয় উদ্ধার প্রচেষ্টা কয়েক বছর আগে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইউরোপীয় জলসীমায় পৌঁছানোর আগে অভিবাসী নৌকাগুলিকে আটকাতে লিবিয়ান উপকূলরক্ষীদের প্রশিক্ষণের উপর আরও জোর দেওয়া হয়েছিল। সমালোচকরা বলছেন যে, ইউরোপ লিবিয়ার আটক কেন্দ্রে অভিবাসীদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিতে দৃষ্টিপাত করছে না।
উল্লেখ্য যে, লিবিয়া বন্দিশিবিরের প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয়জন শরণার্থী প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছে।