কপ২৬: কার্বন কমানোর সম্মেলনে পরিবেশিত হচ্ছে অধিক কাবর্নযুক্ত খাবার!

0
752

বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে এত তোড়জোড়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে হয়তো ভেবে রেখেছিলেন, স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের সময়টুকুতে অন্তত পরিবেশ-বান্ধব খাবারের মেন্যু বেছে নেওয়া হবে। কিন্তু গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ২৬ সম্মেলনে পরিবেশিত খাদ্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর ৬০ শতাংশ খাবারেই রয়েছে উচ্চ মাত্রার কার্বন।

এটি ফুসফুসের ক্যান্সার সম্মেলনে সিগারেট পরিবেশনের মতো

জলবায়ু সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠনগুলো জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬-এ পরিবেশিত খাবারের মেন্যুর গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দাবি, চলমান সম্মেলনে পরিবেশন করা প্রায় ৬০ শতাংশ খাবারই মাংস বা দুগ্ধজাত, যা উৎপাদন করতে গিয়ে নিঃসরিত হয় ব্যাপক মাত্রার কার্বন।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এ ধরনের খাবারের মেন্যু ঠিক করার পরিকল্পনাকে ‘পুরোপুরি বেপরোয়া’ বলে সমালোচনা করেছেন। কড়া ভাষায় তারা মন্তব্য করেছেন যে, এটি ‘ফুসফুসের ক্যান্সার সম্মেলনে সিগারেট পরিবেশনের মতো’।

কপ২৬ সম্মেলনে বিশ্ব নেতা ও প্রতিনিধিদের খাবারের মেন্যুতে রাখা হয়েছে স্যুপ, স্যান্ডউইচ, পিৎজা, পাস্তা এবং পেস্ট্রির মতো খাবার। সম্মেলনে খাবারের মেন্যু সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া ‘এ রেসিপি ফর চেঞ্চ ডট কো ডট উইকে’ নামে একটি ওয়েবসাইট বলছে, সম্মেলনে প্রস্তাবিত খাবারের প্রতিটিই কার্বন ফুটপ্রিন্ট মেন্যুর তালিকাভুক্ত খাবার। তাদের তথ্যমতে, বার্গার, ভেনিসন, বিফ রামেন এবং হ্যাগিস এর মতো উচ্চ কার্বনযুক্ত খাবার নির্বাচন করেছে কর্তৃপক্ষ।

কার্বন নির্গমন কমানোর অন্যতম কার্যকর উপায় হিসাবে উদ্ভিজ-ভিত্তিক খাবারের পক্ষে সমর্থন করে এই ওয়েবসাইটটি। সর্বনিম্ন-কার্বন উৎপাদনের বিকল্প হল সম্পূর্ণরূপে উদ্ভিজ-ভিত্তিক খাবারে অভ্যস্ত হওয়া। উদাহরণস্বরূপ, একটি কেল এবং উদ্ভিজ পাস্তা খাবার প্রতি পরিবেশনে মাত্র ০.৩ কেজি কার্বন উৎপন্ন করে ।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার এই বার্তা প্রচার করে যে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য খাবারে কার্বনের পরিমান অবশ্যই ০.৫ কেজি সিও২ই-এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে।

আরো পড়ুন
▪জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে ভাগ করে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রীগ্লাসগোর সুবাতাস কি আদৌ পৌঁছাবে ‘শ্যামনগরে’?

কিন্তু পুরো সম্মেলনে, প্রস্তাবিত খাবারের ৪২ শতাংশ মাংস বা মাছভিত্তিক, যেখানে ১৭ শতাংশ দুগ্ধজাত, অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ মেন্যুতে প্রাণীজ উপাদান রয়েছে। মেন্যুগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে একটি গড় খাবারে ১.৭ কেজি সিও২ই কার্বন ফুটপ্রিন্ট রয়েছে এবং প্রতিটি খাবারকে তারা নিম্ন, মাঝারি বা উচ্চ বিভাগে শ্রেণিবিন্যস্ত করেছে।

রেটিং সিস্টেম অনুসারে ‘হ্যাগিস, নিপস এবং ট্যাটিস’ উৎপাদন করতে ৩.৪ কেজি কার্বন ব্যবহৃত হয়, যা প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি। মেন্যুতে সবচেয়ে বেশি কার্বনযুক্ত খাবার হিসেবে আছে চিজবার্গার, ট্যাটিস ৩.৪ কেজি এবং স্কচ বিফ রামেন ৩ কেজি করে কার্বন ফুটপ্রিন্টযুক্ত।

যদিও প্রাতঃরাশের মেন্যুটি অনেক বেশি অনুকরণীয় ছিল, যেখানে কার্বনের পরিমান সমস্ত খাবারে ০.৫ কেজির নিচে ছিল।

মাংস এবং দুগ্ধ থেকে বিশ্বব্যাপী গবাদি পশু যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে, তা সমস্ত মানব-চালিত কার্বন নির্গমনের ১৪.৫ শতাংশের জন্য দায়ী।

যুক্তরাজ্য সরকারের নিজস্ব জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টারা প্রাণিজ খাবারের চাহিদা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ইউকে মিউজিক ফেস্টিভ্যাল শাম্বালাসহ যুক্তরাজ্যের অন্যান্য ইভেন্টগুলি পরিবেশ বান্ধব হওয়ার অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে মেন্যু থেকে মাংসকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে দিয়েছে।

প্রচারাভিযান গ্রুপ অ্যানিমেল রেবেলিয়নের মুখপাত্র জোয়েল স্কট-হাল্কস বলেছেন, এমন মেন্যু নির্বাচন জলবায়ু সংকটের মূল কারণ বোঝার জন্য ‘যুক্তরাজ্য সরকারের ব্যর্থতার একটি গুরুতর উদাহরণ।

তিনি বলেন, ‘[মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে] পশু পালন বন উজাড়ের সবচেয়ে বড় কারণ এবং বৈশ্বিক বার্ষিক কার্বন নির্গমনে অন্তত ১৮ ভাগ অবদান রাখে এটি। তাহলে কেন জলবায়ু সম্মেলনে এটিকে প্রচার করা হবে?’

তিনি বিশ্বনেতাদের এমন ‘ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতা’ কে ‘ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অপমান’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন তিনি।

‘যতদিন এই ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, ততদিন জলবায়ু জরুরী পরিস্থিতি কখনই সমাধান হবে না’-তিনি যোগ করেন।

পরিবেশবাদীরা বলছেন যে, উদ্ভিজ খাদ্য ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতে পারলে প্রকৃতি পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে এবং ‘বায়ুমণ্ডল থেকে ১৬ বছরের বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

সূত্র: বিগ ইস্যু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here