তীব্র পানি সংকটে বিপন্ন সিরিয়া ও ইরাকের কোটি মানুষের জীবন

0
92
পানি সংকট ইরাক, সিরিয়া- অভিবাসী

সিরিয়া ও ইরাকের এক কোটি ২০ লাখ বাসিন্দা তীব্র পানি সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। গতকাল ১৩টি সাহায্যকারী সংস্থা ‘রিলিফওয়েব’-এর মাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি সংকটের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য সমস্যাও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে এই দুই দেশের বাসিন্দাদের ওপর। এমনকি তাদের অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পর্যন্ত।


মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তাপমাত্রা, কম বৃষ্টিপাত, ও ক্ষরার কারণে এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই সংকট তীব্রতর হয়েছে। এখানকার মানুষ খাবার ও কৃষিকাজের পানি সংগ্রহ করতে বেসামাল হয়ে পড়েছেন। সিরিয়া ও ইরাকে বর্তমানে চলতে থাকা ভয়ঙ্কর এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সবার একযোগে কাজ করা উচিৎ বলে সংগঠনগুলো আহ্বান জানিয়েছে।


‘রিলিফওয়েব’ এর মাধ্যমে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সিরিয়ার ৭০ বছরের ইতিহাসে বর্তমানে সবচেয়ে তীব্র পানি সংকট চলছে। ৫০ লাখেরও বেশি সিরিয়ান পুরোপুরিভাবে দেশটির নদীর ওপর নির্ভরশীল। দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করছে। বাঁধের পানিও শেষ হওয়ার পথে।

ছবি: আল জাজিরা

এর ফলে স্বাস্থ্যসুবিধাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগুলির কার্যক্রম পরিচালনায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। উত্তর সিরিয়ার দুটি ড্যাম ৩০ লাখ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছে। তীব্র খরায় কৃুষিকাজ মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া সিরিয়ার হাসাকাহ, আলেপ্পো, রাকার মতো শহরগুলোতে ডায়রিয়াসসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।


নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের আঞ্চলিক পরিচালক কারস্টেন হানসেন বলেন, ‘পানি ও খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লাখ লাখ সিরিয়ান ও ইরাকির জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে।’ ‘কয়েক লাখ ইরাকি বর্তমানে বাস্তুচূত হয়ে আছেন এবং সিরিয়ায় জীবন বাঁচাতে এখনো মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

এখন এই পানির সংকট খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরো অসংখ্য মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুুচ্যূতের পথে ঠেলে দিবে।’ অন্যদিকে ‘এআরই’ এর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালনক নির্ভনা শাওকি বলেছেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে জরুরি খাদ্য সহযোগিতা ছাড়াও তাদের পানি সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তন ও সংকটে কোভিড-১৯ মহামারির ভূমিকার পাশাপাশি ইউফ্রেটিস নদীর পানি কমে যাওয়ার কারণেও পানি সংকট তীব্রতর হয়েছে। তুরস্ক থেকে শুরু করে এই নদী সিরিয়া ও ইরাকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহের হার জানুয়ারিতে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ ঘনমিটার থেকে সেকেন্ডে ২১৪ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ডে নেমে এসেছে। সিরিয়ার ৫০০ মিলিয়নের বেশি ও কমপক্ষে সাত মিলিয়ন ইরাকি এ নদীর ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।


এবছর ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা নিনেওয়াতে খরার কারণে গম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলেও প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। কেউ কেউ প্রতি মাসে পানির জন্য গড়ে ৮০ ডলার পর্যন্ত খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

আদিবাসী স্থানীয় নেতা আবদুল্লাহ বলছিলেন, ‘এই তীব্র খরা প্রত্যক্ষ করেছি। খরার কারণে এবছর আমাদের জমিতে কোনো ফসলই ফলেনি। এমনকি আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পশুদের খাওয়ার মতোও কোনো পানির সন্ধান করতে পারিনি।’ ইরাকের নিনেওয়ার বাজ নামক জায়গা বাসিন্দা কৃষক হামিদ আলি দুঃখপ্রকাশ করে বলছিলেন, ‘খরার কারণে আমি কোনো গম চাষই করতে পারিনি। এখন আমি ঋণের দায়ে জর্জরিত।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here