‘বিয়ের পর নারীদের অবশ্যই একটি নতুন পরিবারে অভিবাসিত হতে হয় অথবা কর্মসংস্থানের জন্য নতুন কোনো শহরে যেতে হয়, তাই প্রকৃতপক্ষে নারীরাই আসল অভিবাসী’- এমনটাই মন্তব্য করেছেন স্বনির্ভর নারী সংগঠন বা সেল্ফ ওমেন’স অ্যাসোসিয়েশন (এসইডব্লিউ-ভারত) এর চেয়ার রেনানা জাবওয়ালা।
সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আয়োজিত ‘থিঙ্ক মাইগ্রেশন’ শিরোনামের ওয়েবিনার সিরিজের অষ্টম পর্বের সপ্তম সংস্করণে কথা বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। রনানা জাবওয়ালা আরো বলেছেন, ‘যদিও আমরা এইসব নারীদের নিয়ে তেমন কোনো কথাই বলি না, যাদেরকে স্বামী দেশান্তরিত হওয়ার পরও একা থাকতে হয়।’
থিঙ্ক মাইগ্রেশন শিরোনামের এ অধিবেশনে আরো আলোকপাত করা হয়েছে যে, কোভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট সংকট কীভাবে অভিবাসী নারী ও শিশুদের প্রভাবিত করেছে এবং কীভাবে এই বিষয়গুলো নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন ন্যাশনাল ডাটা ইনোভেশন সেন্টার এর অধ্যাপক ও সেন্টার ডিরেক্টর সোনালদি দেসাই। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, (ভারতের) ৪৫ কোটি অভিবাসীর মধ্যে ৩১ কোটি নারী। যার মানে দাঁড়ায়, অভিবাসীদের ৬৭ শতাংশ নারী। প্রায় ২১ কোটি বিবাহিত অভিবাসী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ অর্থাৎ চার কোটি অভিবাসী নারী তাদের পরিবারের সঙ্গে অভিবাসিত হয়।
এককভাবে অভিবাসী নারীদের সংখ্যা প্রায় ৩ শতাংশ বা ৭৩ লাখ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অথচ সবচেয়ে বৃহৎ এ জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের কাছে কার্যত কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে যতটুকু আছে তার মধ্যে খুবই খারাপ পরিসংখ্যান হলো, ‘আমাদের মানব উন্নয়ন সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা দেখেছি যে, ২০০৪ সালে প্রায় ৩ শতাংশ নারীকে বাড়িতে রেখে তাদের স্বামীরা দেশান্তরী হয়েছেন। ২০১১ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে আট শতাংশ দাঁড়িয়েছে’-মন্তব্য জনাব দেসাইয়ের।
এদিকে এ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করে বক্তারা আরো জানান, নারীরা এমনিতেই পদে পদে বঞ্চনার শিকার হয়, এরপর আবার যখন কিনা তাদের বিয়ে হয় এবং সংসার ও কর্মসংস্থানের কারণে শেকড় ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন আরেকটি পরিবার কিংবা অন্যত্র অভিবাসিত হতে হয়, তখন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ তাদের নূন্যতম মৌলিক অধিকারটুকু প্রাপ্তিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
বক্তারা আরো জানান, একইরকমভাবে মা ও বাবার অভিবাসনকালে শিশুরাও চরম অসহায়ত্বের শিকার হয়। পর্যাপ্ত আধুনিক উপকরণ না থাকার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় এই শিশুরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। এসময় বক্তারা শিক্ষাখাতের উন্নয়নে আধুনিক সরঞ্জামাদি বিতরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস